শিশুর স্ক্রিন আসক্তি কমাতে বইমেলায় সুডোকু’র বই
২০২৩ সালের এক গবেষণায় জানা যায় বিশ্বের প্রায় ১৩.১ শতাংশ মানুষের স্ক্রিন আসক্তি আছে। যার মধ্যে ১৩ থেকে ২৫ বছরের ব্যক্তিদের হার ২৩.২ শতাংশ। প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহার বাড়ছে। স্ক্রিন ব্যবহারের কারণে আসক্তির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। স্প্রিংগার নেচারে প্রকাশিত ২০২৪ সালের আরেকটি গবেষণায় ধারণা করা হয়, ৬৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মুঠোফোনে আসক্ত, যাদের ৯ শতাংশ মারাত্মকভাবে আসক্ত।
শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি কমাতে বিভিন্ন ধরণের পাজল মেলোনার পরামর্শ দেন মনোবিদেরা। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি কমাতে বইমেলায় সুডোকু’র ওপরে ‘‘প্রতিদিন সুডোকু ১’’ নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রফেশনাল ফেলো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের গবেষক জাহিদ হোসাইন খান সুডোকু’র ওপরে বইটি লিখেছেন।
লেখক জাহিদ হোসাইন খান জানান, ‘‘শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ। শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্য মাঠের খেলাধুলার পাশাপাশি মস্তিষ্কের ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে দাবার চল শুরু হয়। ১৯২০-র দশকে আমেরিকায় শব্দজট খেলার চল শুরু হয়। ১৯৮০-র দশক থেকে সারা বিশ্বে সুডোকুর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। বাংলাদেশেও ২০০০ সালের পর থেকে সুডোকুর জনপ্রিয়তা দেখা যায়। বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় সুডোকু প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। সুডোকু নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ানশিপেও বাংলাদেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছে। বাংলাভাষায় সুডোকু সমাধানের নানান কৌশল ও বিশ্লেষণাত্মক উপায় নিয়ে প্রতিদিন সুডোকু ১ বইটি বিন্যাস করা হয়েছে। শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি থেকে সরিয়ে আনতে অভিভাবকদের হাতে বইটি তুলে দেয়া হয়েছে।’’
থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক নাদিম রেজা বলেন, ‘‘আমার সন্তানের স্ক্রিন আসক্তি আছে। সুডোকুর সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় দেখে আমি অবাক হয়েছি। সুডোকু মেলাতে না পারলেও অনেকটা সময় নিয়ে কোন ব্লকে কোন সংখ্যা বসবে তা নিয়ে মাথা খাটাতে দেখা যায়। যে শিশুকে স্ক্রিন থেকে দূরে রাখা যায় না, তাকে সুডোকু মেলানোর আগ্রহ দেখে আমি অভিভাবক হিসেবে অবাক হয়েছি।’’
যুক্তরাষ্ট্র ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পিএইচডি গবেষক ড. নাদিম চৌধুরী বলেন, ‘‘সুডোকুর ক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুডোকু নামের ধাঁধার গ্রিড মনকে অচল করে দেয়, যেন মস্তিষ্কের সব ক্ষমতাকে একটি ৯×৯ বর্গাকার জালের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে সাবধানে পূরণ করতে হবে, নির্দিষ্ট সব নিয়ম মেনে। এই আবদ্ধতা আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। আন্তর্জাতিকভাবে সুডোকুর জনপ্রিয়তা অনেক। সেই প্রেক্ষিতে সবাই সুডোকু চর্চা করতে পারেন।’’
রকমারিডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘‘আমাদের সবার প্রিয় জাতীয় অধ্যাপক ডা. জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার প্রতিদিন সুডোকু মেলাতেন। শিক্ষার্থী যারা মনোযোগসংক্রান্ত সমস্যা বোধ করে সুডোকু তাদের জন্য নিয়মিত চর্চার একটি বিষয় হতে পারে।’’
প্রতিদিন সুডোকু ১ বইটি স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন থেকে ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। ২৫ শতাংশ ছাড়ে বইটি অনলাইন বইয়ের দোকান প্রথমায় পাওয়া যাচ্ছে: https://www.prothoma.com/product/46229/protidin-suduku-1