প্রতিবেদন

মোবাইল ফোনই যখন ব্যাংক: কীভাবে এমএফএস বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। এক দশক আগেও যেখানে আর্থিক লেনদেন মানে ছিল ব্যাংকের লম্বা লাইন বা পরিচিতজনের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, আজ মোবাইল ফোনই হয়ে ওঠেছে আর্থিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রধান মাধ্যম। এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত সেবা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতীক, যা কোটি কোটি মানুষকে এনেছে আর্থিক ব্যবস্থার মূল স্রোতে। এই প্রতিবেদনটি এমএফএস-এর উত্থান, এর বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরবে।

এক যুগান্তকারী পথচলা: বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ
বিশ্বে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ধারণা শুরু হয় ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে। প্রথম দিকে এটি মূলত এসএমএস নির্ভর সেবা ছিল। এরপর ১৯৯৯ সালে ডব্লিইউএপি (WAP) সমর্থিত স্মার্টফোন আসার পর ইউরোপের কিছু ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। তবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ২০০৭ সালে আইফোনের আবির্ভাব এবং অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক ফোনের প্রসারের পর, যখন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক এমএফএস-এর প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশে এমএফএস-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয় ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে। এই যাত্রার অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে বিকাশ। এরপর ডাচ-বাংলা ব্যাংক রকেট নামে তাদের সেবা নিয়ে আসে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই শুরুর দিকে এমএফএস-কে জনপ্রিয় করে তোলে।

সাফল্যের কারণ এবং গ্রহণযোগ্যতা
বাংলাদেশে এমএফএস-এর দ্রুত প্রসারের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে- দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি, যা এমএফএস-এর জন্য বিশাল বাজার তৈরি করে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ, প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। এমএফএস তাদের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিয়েছে। এমএফএস ব্যবহার করা খুবই সহজ। একটি সাধারণ ফিচার ফোন দিয়েও ইউএসএসডি (USSD) ডায়াল করে লেনদেন করা যায়। টাকা পাঠানো বা বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। যেকোনও সময়, যেকোনও জায়গা থেকে লেনদেন করা যায়। দেশজুড়ে বিশাল এজেন্ট নেটওয়ার্ক থাকায় গ্রাহকরা সহজেই ক্যাশ-ইন এবং ক্যাশ-আউট করতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা
এমএফএস অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতাও রয়েছে- গ্রামীণ ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমএফএস ব্যবহার নিয়ে এখনও কিছু অজ্ঞতা রয়েছে, যা তাদের প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে লেনদেনের খরচ এখনও সাধারণ মানুষের জন্য বেশি মনে হতে পারে। ফিশিং, পিন চুরি এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রতারণার কারণে গ্রাহকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কিছু অসাধু ব্যবহারকারী অবৈধ হুন্ডি বা অর্থ পাচারের মতো অপরাধে এমএফএস-এর অপব্যবহার করে।

বর্তমান চিত্র এবং আর্থিক তথ্য (২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী)
বর্তমানে বাংলাদেশের এমএফএস বাজারে প্রধানত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার মধ্যে বিকাশ এবং নগদ শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়াও রকেট, উপায়, ট্যাপ, ওকে ওয়ালেট এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই খাতে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের এমএফএস খাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান নিচে দেয়া হলো-
মোট গ্রাহক সংখ্যা: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ২৩.৮৬ কোটি। এটি ২০২৩ সালের তুলনায় ১.৮২ কোটি বেশি। লেনদেনের পরিমাণ: ২০২৪ সালে এমএফএস-এর মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭.৩৭ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৮.৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসিক লেনদেন: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে একক মাসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৬৪ লাখ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দৈনিক গড় লেনদেন: বর্তমানে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা।

এই সংখ্যাগুলো প্রমাণ করে যে এমএফএস বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু আর্থিক লেনদেন সহজ করছে না, বরং একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ব্যবস্থার মূলধারায় এনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে।

আরও গভীরে: এমএফএস-এর লেনদেন ও ব্যবহারকারীর চিত্র
এমএফএস-এর প্রভাবকে আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য কিছু বিস্তারিত ডেটা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে-
গ্রাহক শ্রেণিবিভাগ ও লেনদেনের ধরণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এমএফএস ব্যবহারকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রামীণ ও অপ্রচলিত ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী। লেনদেনের ধরণেও ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়। মোট লেনদেনের বেশিরভাগই পার্সোনাল ট্রানজাকশন, যেখানে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে টাকা আদান-প্রদান করে। এর পাশাপাশি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট বিল এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পরিশোধের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়াও, কেনাকাটা বা মার্চেন্ট পেমেন্ট একটি দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র হয়ে ওঠেছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর প্রভাব: এমএফএস ব্যবহারের কারণে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অনেক বেড়েছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, এমএফএস ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশের কোনও প্রথাগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এটি প্রমাণ করে যে, এমএফএস সরাসরি আন-ব্যাংকড জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় এনেছে। এর ফলে, তারা শুধু টাকা আদান-প্রদানই করছে না, বরং ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং অন্যান্য আর্থিক কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এবং দারিদ্র্য কমাতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।

এমএফএস-এর মাধ্যমে প্রতারণা এবং গ্রাহক সুরক্ষা
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতারণার ঘটনা। প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ ধরন হলো-
ভুয়া কল: প্রতারকরা নিজেদের এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের পিন নম্বর বা OTP জানতে চায়।
ভুয়া মেসেজ: গ্রাহকদের মোবাইলে বিভিন্ন অফার বা টাকা পাওয়ার ভুয়া মেসেজ পাঠিয়ে একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয়, যার মাধ্যমে তাদের তথ্য ও অর্থ চুরি করা হয়।
এজেন্ট প্রতারণা: কিছু অসাধু এজেন্ট গ্রাহকের অজান্তে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেয় বা লেনদেনের সময় অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।

প্রতারণা মোকাবিলায় এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে
সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রতিষ্ঠানগুলো এসএমএস, অ্যাপ নোটিফিকেশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত গ্রাহকদের সচেতন করে।
সুরক্ষিত লেনদেন: লেনদেনের জন্য দ্বি-স্তর যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা: গ্রাহকদের জন্য ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার ও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

নীতিমালা: গ্রাহক বনাম এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা এমএফএস খাতের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করেছে, যা গ্রাহক সুরক্ষা এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে। নীতিমালা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় বেশ কিছু নিয়ম তৈরি করেছে। যেমন: লেনদেন সীমা নির্ধারণ এবং গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা। নীতিমালা এমএফএস খাতের প্রসারের জন্যও সহায়ক। যেমন: লাইসেন্সিং ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই খাতের সুশৃঙ্খল বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং এজেন্ট নিয়োগের নিয়মকানুন নির্ধারণ। তবে, নীতিমালার কঠোরতা কিছু ক্ষেত্রে এমএফএস-এর প্রসারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যেমন, লেনদেন সীমা কখনও কখনও বড় অংকের লেনদেনের জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।

এমএফএস-এর মাধ্যমে সরকারি সেবা
সরকার বিভিন্ন সরকারি সেবা এমএফএস-এর মাধ্যমে প্রদান করে ডিজিটাল রুপান্তরের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি একদিকে যেমন সরকারি সেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করছে, তেমনি এমএফএস-এর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি করছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা যা এমএফএস-এর মাধ্যমে দেয়া হয়- বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা সরাসরি এমএফএস অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং কিছু সরকারি ট্যাক্স এমএফএস-এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিকদের বেতন এবং সরকারি কর্মচারীদের কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়। এই পদক্ষেপগুলো এমএফএস-কে কেবল একটি ব্যক্তিগত লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ
এমএফএস-এর ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেন আরও সুরক্ষিত ও দ্রুত করা সম্ভব। তবে, গ্রাহকের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতারণা দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এই খাতটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি কেবল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: এক বৈশ্বিক বিপ্লবের অংশ
এমএফএস শুধু বাংলাদেশের একার ঘটনা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক প্রবণতা। আফ্রিকার কেনিয়াতে M-Pesa এবং ভারতে Paytm-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের এমএফএস খাতও একই ধরনের মডেল অনুসরণ করে একটি বৈশ্বিক ডিজিটাল আর্থিক বিপ্লবের অংশ হয়ে ওঠেছে।

প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব, যা প্রতারণা প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সরকারও ভবিষ্যতে এমএফএস এবং ব্যাংকগুলোর মধ্যে লেনদেন সহজ করার জন্য বিনিময় (Binimoy) নামক একটি আন্তঃবিনিময়যোগ্য প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও গতিশীল করবে।

এমএফএস: নিয়ম-কানুন, সেবা এবং সরকারের রাজস্ব
বাংলাদেশের এমএফএস খাত কি সঠিক পথেই আছে? নীতিগতভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের তত্ত্বাবধানে এমএফএস একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে ভ্যাট এবং ট্যাক্স দিচ্ছে, কিন্তু এর পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের বিশালতার কারণে এই খাত থেকে সরকারের আরও বেশি রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রাহকদের জন্য এমএফএস-এর সেবা আরও সাশ্রয়ী হওয়া উচিত কিনা, এই বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিতর্ক আছে। অনেক গ্রাহকের মতে, ক্যাশ আউটের চার্জ এখনও বেশ বেশি। কিছু এমএফএস প্রতিষ্ঠান সেন্ড মানি সেবা বিনামূল্যে প্রদান করছে, যা গ্রাহকদের জন্য খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি টাকা পাঠানো বা ব্যাংক থেকে এমএফএস-এ টাকা পাঠানো এখনও সহজলভ্য নয়। সরকার এই সমস্যা সমাধানে বিনিময় (Binimoy) প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।

এআই এবং ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে এমএফএস-এর ভূমিকা
এআই এবং ক্যাশলেস সোসাইটির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা এমএফএস-এর ভবিষ্যৎকে নতুন দিকে চালিত করছে।
এআই-এর প্রভাব: এআই প্রযুক্তি এমএফএস-এর কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলবে। এটি লেনদেনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সাহায্য করবে। যেমন, এআই ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেনগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। এ ছাড়াও, এআই গ্রাহকের লেনদেনের ধরন বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিগতকৃত আর্থিক সেবা প্রস্তাব করতে পারবে।

ক্যাশলেস সোসাইটি: একটি ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার ক্ষেত্রে এমএফএস হলো প্রধান চালিকাশক্তি। যেখানে প্রথাগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই কোটি কোটি মানুষ লেনদেন করতে পারছে, সেখানে নগদ টাকার ব্যবহার দ্রুত কমে আসছে। এমএফএস ক্যাশ থেকে ডিজিটালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে, যা একটি নগদ-বিহীন সমাজ গঠনে সরাসরি অবদান রাখছে।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তর। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত, এমএফএস-এর ভূমিকা অপরিহার্য। যদিও এই অগ্রযাত্রায় কিছু চ্যালেঞ্জ যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি, উচ্চ চার্জ এবং নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি রয়েছে, তবুও সরকার এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাতটি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আগামীতে, আন্তঃবিনিময়যোগ্য প্ল্যাটফর্মের প্রসার এবং প্রযুক্তিগত সুরক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে এমএফএস সত্যিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করবে, যা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *