বেসিস’র “ইনস্যুরটেক-স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি নতুন মাইলফলক” সেমিনার
ক.বি.ডেস্ক: দেশের সফটওয়্যার খাতের বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) “ইনস্যুরটেক- স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি নতুন মাইলফলক” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ইনস্যুরটেক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন মাইলফোলক হিসেবে কাজ করবে। বীমা খাতে সম্ভাবনা অনেক তাই প্রযুক্তির ব্যবহারে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। উন্নত দেশে বাজেট প্রস্তাবনা তৈরির সময় ইন্সুরেন্স কোম্পানির তথ্য এবং প্রিমিয়ামের নির্ভরতা গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম দুইটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন ও স্মার্ট সোসাইটি গঠনে ইনস্যুরটেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বেসিস’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত “ইনস্যুরটেক- স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি নতুন মাইলফলক” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিস’র সহ-সভপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিস’র ফিনটেক অ্যান্ড ডিজিটাল পেমেন্টস বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কো-চেয়ারম্যান ফিদা হক।
মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বেসিস, ইডরা এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন একসঙ্গে কাজ করলে ইনস্যুরটেক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন মাইলফোলক হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বিগত ১৫ বছর এদেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখেছি, যা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে জোয়ার এনেছে। ভারতে বীমা সেবা জিডিপিতে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রাখে। আমরা এখনো শিখছি। আমি আশা রাখি বীমা সেবা আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নে একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অনেক উদার। বীমা সেবার মতো সংবেদনশীল একটি সেক্টর স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এদেশে ব্যবসা করতে পারবে।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ২০২১ সালে ছিল ০.৫ শতাংশ যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত ০.৫ শতাংশই রয়ে গেছে। বীমা সম্পর্কে সর্বসাধারণের জ্ঞান সীমিত হওয়ার দরুণ এবং সময়মতো বীমার দাবি না পাওয়ায় এই খাতে আস্থা হারিয়েছে মানুষ। বীমা খাতে সম্ভাবনা অনেক তাই প্রযুক্তির ব্যবহারে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বীমাকে সার্বজনীন করতে বীমা খাতকে অটোমেশনের পাশাপাশি একটি ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে বেসিস এর পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতকেও যুক্ত করতে হবে।
শেখ কবির হোসেন বলেন, ইন্সুরেন্স, বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইন্সুরেন্স সেক্টর সবচেয়ে অবহেলিত সেক্টর। উন্নত দেশে বাজেট প্রস্তাবনা তৈরির সময় ইন্সুরেন্স কোম্পানির তথ্য এবং প্রিমিয়ামের নির্ভরতা গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর পরে কেউ আর ইন্সুরেন্স নিয়ে এগিয়ে আসেনি সেজন্যই এই সেক্টর এতটা অবহেলিত। বেসিসকে তিনি ইন্সুরেন্সকে প্রযুক্তির আওতায় আনার নীতিমালা প্রস্তাবের পাশাপাশি কিভাবে ইন্সুরেন্স সম্পর্কে নেতিবাচক সামাজিক মানসিকতা বদলানো যায় সে ব্যাপারেও নীতিমালা প্রস্তাব করতে আহ্বান জানান।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম দুইটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন ও স্মার্ট সোসাইটি গঠনে ইনস্যুরটেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত আইসিটির গুরুত্ব রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ হতে হলে সব ক্ষেত্রেই স্মার্ট হতে হবে এবং এক্ষেত্রে আইসিটি নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করবে। বীমার ওপর এদেশের মানুষের আস্থা এখনো খুব কম, এই ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এদেশের তরুণ প্রজন্ম ইনস্যুরটেক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে এবং নতুন ইনস্যুরটেক সেবা নিয়ে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বীমা সেবায় সম্পৃক্ত করতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন্স জারি করেছে। ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন্স, ২০২৩’ জারির মাধ্যমে বীমা সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বর্তমানে দেশের এক কোটি বীমা গ্রাহক দ্রুত ও কার্যকরি বীমা সেবা পাবে এবং ইন্সুরেটক প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে সক্ষম হবে। ফলশ্রুতিতে স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম দুটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন ও স্মার্ট সোসাইটি গঠনে ইনস্যুরটেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি জিডিপিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটবে।