বেসিসকে দাবায় রাখা যাবে না: সালমান এফ রহমান
ক.বি.ডেস্ক: বেসিসের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, নীতিগত সহায়তা দিলে বেসিসকে দাবায় রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উদ্ধৃতি দিয়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদের কথার সূত্র ধরে গতকাল রবিবার বেসিস সফটএক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
গতকাল রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী (২৩-২৬ ফেব্রুয়ারি) বেসিস সফটএক্সপো’র সমাপনী অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম, ফাইবার অ্যাট হোমের সিইও ময়নুল হক সিদ্দিকী, এফআইসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিরুজ্জামান বিজয় এবং বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা।
সালমান এফ রহমান বলেন, দুইটি পলিসি সাপোর্ট দেয়ায় পোশাকশিল্প বদলে আজকের অবস্থায় এসেছে। আর্থিক প্রণোদনা একটা পর্যায়ে নিয়ে যায়, তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন। কোন পলিসি সাপোর্ট দিলে বড় ধরনের ইমপ্যাক্ট পড়বে, মৌলিক পরিবর্তন হবে সেটি আপনাদেরকে বের করে সরকারকে জানাতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা এসেছে। আমারে মনে হয় এটাতে বিশেষভাবে নজর দিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করতে হবে। তবে সেটা সবাইকে নয়, এটা খুঁজে বের করে যাদের দিয়ে কাজ হবে এমনদের প্রশিক্ষণ দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি এসব ২০২৫ সালের মধ্যে করতে হবে। কিন্তু আমার কথা হলো কেন সেটা ২০২৩ সালের মধ্যে নয়। আমি চাই এটা শুরুটা হোক এ বছরেই। আরেকটি বিষয় অ্যাকাডেমিয়া। একটা সময় কিন্তু শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে কোনো অর্থ দেওয়া হতো না। সেটা এখন পরিবর্তন করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে আমি মনে করি, ট্রেড বডির যে কাজ সেটা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সহযোগীতা করা। বেসিস সেটি করছে। আমি মনে করি এটিও অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উদ্ধৃতি দিয়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ যে কথা বলেছেন যে এসব সহযোগিতা দিলে বেসিসকে দাবায় রাখা যাবে না, আমারও এই মেলা দেখার পর মনে হয়েছে বেসিসকে দাবায় রাখা যাবে না।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ যে থ্রি বাই থ্রি থিওরির কথা বলেছেন, তাতে আমি সম্পূর্ণ একমত। কেননা সরকার যে ভিশন নিয়ে কাজ করছে সেখানে অবশ্যই বেসরকারি খাত, সরকার এবং অ্যাকাডেমিয়া। এর সঙ্গে আমি আরও চারটি বিষয় যুক্ত করতে চাই। প্রথমত, সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা। সরকার নীতিগত সহায়তা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ সুবিধা পান। তখন দেশ এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত রফতানির ওপর প্রণোদনা। সেটা ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর। তারা কিন্তু ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন। তৃতীয়ত: মানবসম্পদ উন্নয়ন। এটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেব।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, এবারের আয়োজনে প্রায় দুই লাখ দর্শনার্থী সফটএক্সপো ভ্রমণ করেছেন। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী ২০৪টি কোম্পানি ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে প্রায় একশ বিশ কোটি টাকার সম্ভাব্য লিড পেয়েছে। ঢাকার বাইরে হলেও এটি একটি মাইলফলক। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি যে চ্যালেঞ্জ পেয়েছি তা মোটেও অসম্ভব নয়। শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ আমরা এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারি। সেজন্য আমাদের সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়া এই তিনটি স্টেকহোল্ডারের একসঙ্গে তিনটি কাজ করতো। কাজগুলো হলো- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যথাযথ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, বিদেশে আমাদের সক্ষমতা তুলে ধরতে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে দক্ষ জনবল তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, এবারের বেসিস সফটএক্সপোর সকল আলোচনা ও প্রস্তাবনা ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট উভয় মাধ্যমেই রেকর্ড করা হয়েছে। এগুলো প্রকাশনা আকারে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে। অ্যাম্বেসেডর নাইট অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই মাস অন্তর আমাদের সঙ্গে বসবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবেন। আমরা প্রত্যাশা করি এভাবে সকল স্টেকহোল্ডার কাজ করলে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন খুব বেশি দূরে নয়।