বাজেটে বেসিস’র প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি
ক.বি.ডেস্ক: গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে আইসিটি খাতের উন্নয়নে বেসিস’র প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি বলে এক সংবাদ সম্মেলনে বেসিস নেতৃবৃন্দ এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
গতকাল শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বেসিস অডিটোরিয়ামে বেসিস’র বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ ও বেসিস পরিচালক এ কে এম আহমদেুল ইসলাম বাবু।
আবু দাউদ খান বলেন, বাজেটে আইসিটি খাতের জন্য বরাদ্দ গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৬.৬৯ শতাংশ (প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা) বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই অর্থ কোন কোন প্রকল্প বা খাতে ব্যয় হবে এবং তার মাধ্যমে আইসিটি শিল্প এবং এই খাতের ব্যবসায়ীরা কীভাবে উপকৃত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বক্তারা বলেন, আইসিটি খাতের বাজেটে বেসিসের প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। আইসিটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উতসাহিত করতে বেসিস কর অব্যহতির সময়সীমা ২০২৪ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিলো। এই বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব পায়নি।
স্থানীয় সফট্ওয়্যার ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর এখন ব্যবসায়-পর্যায়ে ৫% হারে উতসে মূল্য সংযোজন কর কর্তন করা হয়, দেশের সফটওয়্যার শিল্পের অনুকূলে স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব ছিলো। সব মন্ত্রণালয় ও তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য যে বাজেট রয়েছে তার অন্তত ১০% সফটওয়্যার এবং আইটিইএস ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ করারও প্রস্তাব করেছিল বেসিস। কিন্তু এগুলোর বিষয়ে এবারের বাজেটে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেখা যায়নি।
আজকের প্রায় ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেছে আইসিটি খাতের বেসরকারি খাত
বেসিস’র বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বক্তারা বলেন
সাইবার সিকিউরিটি এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের সমস্যা। ঠিকমতো নিরাপত্তা বিধান না করার ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার পণ্যসমূহের ওপর উচ্চ শুল্কহার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের জন্য নতুন করে এইচএস কোড নির্ধারণ করে শুল্ক হার নির্ধারণ করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়, যা এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিফলিত হয়নি।
আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে তাদের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার লক্ষ্যে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার তহবিল ও নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে, নারীদের জন্য কর্মসুযোগ সৃষ্টিকারি সফটওয়্যার ও আইটি প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়োগকৃত নারী কর্মকর্তা/কর্মচারীর মাসিক বেতনের ১০% সরকারি আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব করা হয়। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রকল্প গ্রহণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা তহবিল তৈরির প্রস্তাব করা হয়। অনলাইনে লেনদেন উতসাহিত করতে ক্রেতা ৩ শতাংশ এবং মার্চেন্টদের ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। আইটিইএস এর সংজ্ঞায় প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস (প্যাস)ই-সার্ভিসেস এবং সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিসকে (স্যাস) অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এবারের বাজেটে এই বিষয়গুলো আইটিইএসর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সরকার আইসিটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং ২০২২ সালকে আইসিটি বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজেটে বেসরকারি খাতের অংশিদারিত্ব বৃদ্ধি পায়, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়েনি। অথচ আজকের প্রায় ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেছে আইসিটি খাতের বেসরকারি খাত।
দেশী ল্যাপটপ উতপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা থাকতে হবে, নতুবা এর ফলে আমদানি করা ল্যাপটপের মূল্য বেড়ে গিয়ে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার একটা আশংকা সৃষ্টি হতে পারে
বেসিস’র বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বক্তারা বলেন
বক্তারা আরও বলেন, অন্যান্য অনেকগুলো খাতে করোনাভাইরাসের ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময়ে সময়ে সরকারের কাছ থেকে অনেকগুলো স্কিম গঠন করা হয়েছিল, যেহেতু অন্যান্য খাতের মতো আইসিটি খাতও করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল যা এখনো পুষিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাই এটি দ্রুততার সঙ্গে পুষিয়ে নিতে ৫% সরকার-ভর্তুকিযুক্ত সুদের হারে একটি আইসিটি খাত-নির্দিষ্ট ২,০০০ কোটি টাকার উদ্দীপনা প্যাকেজের কথা প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এটিও বাজেটের রূপরেখায় দেখতে পাইনি।
আইসিটি খাতের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিশেষত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, টোনার ইত্যাদির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এই খাতের ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা উভয়েরই ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে দেশে দ্রুত ল্যাপটপ তৈরির ইকোসিস্টেম গড়ে তুলে দেশী ল্যাপটপ উতপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা থাকতে হবে, নতুবা এর ফলে আমদানি করা ল্যাপটপের মূল্য বেড়ে গিয়ে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার একটা আশংকা সৃষ্টি হতে পারে।
বেসিসর সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ আশা ব্যক্ত করেন যে, সরকার বাজেট আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের উতসাহিত করতে বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। সরকারের সময়োপযোগী এসব পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে বেসিস নেতৃবৃন্দ।