বাংলাদেশে এআই ঝড়, প্রতিদিন ৬০ শাতংশ মানুষই এখন ব্যবহারকারী
ক.বি.ডেস্ক: স্মার্ট জীবনধারার প্রসার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারকে বেগবান করছে মোবাইল প্রযুক্তি। বাংলাদেশের ৯৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিয়মিত এআই ব্যবহার করেন। ২০২৪ সালে এ হার ছিল ৮৮ শতাংশ। এআই বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবন বাড়ালেও, কর্মক্ষেত্রের মাত্র অর্ধেক অংশে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আনুষ্ঠানিক কৌশল।
সম্প্রতি প্রকাশিত টেলিনর এশিয়া ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড ২০২৫: বিল্ডিং ট্রাস্ট ইন বাংলাদেশ’স এআই ফিউচার’ শীর্ষক এক রিপোর্টে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। এটি বাংলাদেশের ১,০০০ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত গবেষণার চতুর্থ সংস্করণ।
টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইওন ওমুন্ড রেভহগ বলেন, “বাংলাদেশে দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিতে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্মার্ট ও আরও সংযুক্ত সমাজ গঠনে এটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠেছে। সংযোগ হলো ভিত্তি, আর এর প্রতিটি স্তরে আস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে এবং সবার কাছে নিরাপদ ও সুরক্ষিত উপায়ে মোবাইল প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে সংকল্পবদ্ধ টেলিনর এশিয়া।”
এআই-কে দৈনন্দিন বাস্তবতায় নিয়ে আসতে ভুমিকা রাখছে মোবাইল ফোন
বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা (৬২ শতাংশ), দূরবর্তী কাজ (৫৪ শতাংশ) এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার (৫০ শতাংশ) মতো ক্ষেত্রে স্মার্ট জীবনধারাকে এগিয়ে নিচ্ছে মোবাইল প্রযুক্তি। গত এক বছরে দূরবর্তী কাজ (+৩৯ শতাংশ) এবং বাজেট ও ব্যয় ব্যবস্থাপনায় (+৩৬ শতাংশ) মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। স্মার্ট হোম ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো এআইচালিত ফিচারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করছে মিলেনিয়ালরা। এসব তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, মোবাইল ব্যবহারের বিস্তৃতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-কে আরও গভীরভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
শিক্ষা ও অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে এআই
বাংলাদেশে প্রায় ১০ জনের মধ্যে ৬ জন এখন প্রতিদিন কোনও না কোনও ধরনের এআই ব্যবহার করছেন। অনেকেই স্কুল, অফিস বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কনটেন্ট তৈরি এবং স্বাস্থ্য, আর্থিক সেবা বা ভ্রমণ পরিকল্পনার মতো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরামর্শ পেতে এআই-এর সাহায্য নিচ্ছেন। কর্মক্ষেত্র, দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং অনলাইনে কেনাকাটায় এআই ব্যবহারের দ্রুত বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, এআই এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এআই তৈরি শিক্ষামূলক কনটেন্ট এবং এআই চ্যাটবটের ওপর মানুষের আস্থা বেশি। এই আস্থাই শিক্ষা ও অর্থনীতিতে সম্ভাবনার আশা জাগাচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা
কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের হার ২০২৫ সালে ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬২ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে যারা কর্মস্থলে এআই ব্যবহার করছেন, তাদের মাত্র অর্ধেক জানিয়েছেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানে এআই-এর আনুষ্ঠানিক কৌশল রয়েছে। এর মানে দায়িত্বশীল এআই ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এআই মূলত কর্মক্ষেত্রে কনটেন্ট লেখা ও তৈরি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আরো বহু কাজে এআই ব্যবহারের সুযোগ আছে। বর্তমানে দৈনন্দিন ও প্রশাসনিক কাজে এআই ব্যবহারের হার মাত্র ২৮ শতাংশ।
এআই-এর অগ্রগতি নিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্বেগ বাড়ছে
বাংলাদেশে মানুষ দৈনন্দিন জীবনে এআই গ্রহণ করলেও, ব্যক্তিগতভাবে এআই-এর ওপর অতিনির্ভরতা, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা এবং গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি এআই ব্যবহার করছেন এবং নিজেদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ কিংবা দক্ষ বলে মনে করেন। তবুও তারাই সবচেয়ে বেশি এআই-এর অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইওন ওমুন্ড আরও বলেন, “বাংলাদেশে এআই-এর সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাও রয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার জন্য সংযোগ ও নিরাপদ ডিজিটাল দক্ষতা নিশ্চিত করা আরও জরুরি হয়ে ওঠছে। সংযুক্ত না হলে কিংবা নিরাপদভাবে ডিজিটাল দুনিয়া পরিচালনা করার সক্ষমতা না থাকলে মানুষ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বা এআই প্রদত্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।”
রিপোর্ট সম্পর্কিত আরও তথ্য: www.telenorasia.com/digitallivesdecoded





