প্রেক্ষাপট কোভিড-১৯: ১৯৩০ কোটি টাকা প্রণোদনা চায় বিসিএস
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে জনজীবনের সঙ্গে সঙ্গে আইসিটিখাতেও এর বিরুপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আইসিটির অগ্রযাত্রায় মহাসংকটসময় এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহযোগিতা ছাড়া আগামীর সমস্যাগুলো সমাধান করা খুব কঠিন হয়ে দাড়াবে। বর্তমান আইসিটি খাতের অবস্থা এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানান বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস)সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর।
যে অদৃশ্য শক্তির সংক্রমণের ভয়ে পুরো পৃথিবী আতঙ্কিত, সে ভাইরাসটির নাম নোবেল করোনা ভাইরাস। মাত্র তিন মাসে কোন ধরণের যুদ্ধ বিগ্রহ, গোলাগুলি বা পারমানবিক বোমার আক্রমণ ছাড়াই বিশ্বব্যাপী দেড় লাখের বেশি মানুষ আজ মৃত। ২১০টি করোনা আক্রান্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশেও করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পৃথিবীর এই দুঃসময়ে যে খাতটি এখনো যোগাযোগ, লেনদেন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যমসহ সবগুলোখাতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে সেই খাতটির নাম আইসিটি।
আইসিটিখাতে কেনো প্রনোদনা প্রয়োজন এই প্রসঙ্গে বিসিএস সভাপতি শাহীদ-উল মুনীর বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হঠাৎ বদলে গেছে দৃশ্যপট। সারা বাংলাদেশ জুড়ে আইসিটি বিপণন কেন্দ্র, হাইটেক পার্ক, জনতা সফটওয়্যার পার্কসহ আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে যাচ্ছে।
লকডাউনের কঠিন মুহূর্তকেও আমরা আইসিটি ব্যবহার করে ফলপ্রসু করে তুলেছি। কিন্তু সত্যিই কি ভালো আছে বাংলাদেশের আইসিটি সংগঠন থেকে শুরু করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাঝারি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা?
১৯৮৭ সালে মাত্র ১১ জন সদস্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিসিএস দেশের আইসিটি খাতে নেতৃত্ব দেয়া সবচেয়ে পুরাতন এবং বর্তমানের সর্ববৃহৎ সংগঠন। ২৩১১ জন সদস্যের প্রত্যেক বিভাগে নিজস্ব শাখা কার্যালয় স্থাপন করে এই বৃহৎ সংগঠনটি সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসার এবং জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, কল সেন্টারের মাধ্যমে আমাদের সেবার খাত নেহায়েত ক্ষুদ্র নয়। প্রতিবছর শুধুমাত্র আইসিটি হার্ডওয়্যার থেকে আমরা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা করছি। বেকারত্বের অবসান ঘটাতে নিত্যনতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, উদ্যোক্তা বানানোর প্রচেষ্টা এবং বাসায় থেকেও আইসিটি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অনলাইন ব্যবসা করার প্রয়াস এই খাতের কারণেই সহজ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থা প্রণয়ণেও আইসিটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
করোনার কারণে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইসিটি খাতেও দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। সারাদেশে লক-ডাউন অবস্থায় জরুরী কার্যক্রমের অধিকাংশই হার্ডওয়্যার পণ্য বা কমপিউটার দিয়ে অনলাইনে চলছে।
তবে আইসিটিরসব সেবা এককভাবে অনলাইনে দেয়ার সুযোগ নেই। জরুরী সেবায় এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক্সপার্টকে হার্ডওয়্যার সরবরাহের পাশাপাশি ইন্সটলেশন এবং নিজে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়। তাই এই খাতকে জরুরী সেবা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের জরুরী চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের এই দিকটিতে বিশেষ নজর দেয়া উচিৎ।
ইতোমধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের সম্ভাব্য বিল এবং ওয়ার্ক অর্ডার পাচ্ছে না। স্থানীয় বাজারেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিপুল সংখ্যক জনবলের বেতন, অফিস ভাড়া, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে দক্ষ জনশক্তি হারানোর আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে।
উদ্যোক্তাদের সাহস দিতে এই খাতে প্রণোদনার কোন বিকল্প নেই। আইসিটি সংগঠনসহ আইসিটিখাতে আগামী ৬ মাসের আংশিক বেতন ও অফিস ভাড়া পরিশোধপূর্বক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে আইসিটি খাতের জন্য কেবলমাত্র বেতন বাবদ ১৫৬০ কোটি ও অফিস, শো-রুম, ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ ৩৭০ কোটিসহ মোট ১৯৩০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করা হোক।
এছাড়াও প্রণোদনার ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনুদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে ৫ বছর মেয়াদী ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেয়া প্রয়োজন। যে ঋণ গ্রহণের এক বছর পর থেকে শোধের সময় শুরু হবে।
১৯৯৮-৯৯ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমপিউটারের ওপর আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার করেছিলেন। আক্ষরিক অর্থে সেসময় শুল্ক খাতে শতকোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিলেও শুধু একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত পুরো দেশকে আজ ডিজিটাল করতে ভূমিকা রেখেছে। আইসিটি শিল্পের এই দুঃসময়ে সরকার আন্তরিক হয়ে প্রণোদনা এবং ঋণের ব্যাপারটি নিশ্চিত করলে আমরা এই খাতকে আরও বেশি লাভজনক খাতে পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হবো।