নারীর ক্ষমতায়নকে দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় ‘হারআইজন ফেস্ট’

ক.বি.ডেস্ক: জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর উদ্যোগে এবং জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জিআইজেড)-এর কারিগরি সহায়তায় দুই দিনব্যাপী (৬-৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয় ‘হারআইজন ফেস্ট ২০২৫: সেলেব্রেটিং ওমেন, স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’। এই আয়োজন নারীর ক্ষমতায়নকে দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নে নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আয়োজনে মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলে ধরা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘হারআইজন ফেস্ট ২০২৫: সেলেব্রেটিং ওমেন, স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন ছিলেন জিআইজেড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আন্দ্রেয়াস কুক। সভাপতিত্ব করেন এনএসডিএ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, এসটিপি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, বেসরকারি খাত ও শিল্প দক্ষতা পরিষদের নেতৃবৃন্দ, নারী নেটওয়ার্ক, যুব সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান সুযোগে নারীরা সমানভাবে অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা এবং সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্বের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে। শিল্প দক্ষতা পরিষদকে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যেন দক্ষ জনবলে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়। এই ধরনের উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়নের জাতীয় নীতিকে আরও গতিশীল করবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।’’
মমতাজ আহমেদ বলেন, ‘‘হারআইজন ফেস্ট নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। কর্মশালা ও আলোচনা সভায় নারীবান্ধব প্রশিক্ষণ, প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সুযোগ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। সরকারি, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সহযোগিতা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণে দিকনির্দেশনা দেবে।’’
ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘‘নারী, দক্ষতা এবং কর্মসংস্থান-এই তিনটি কেবল পৃথক ধারণা নয়, বরং উন্নত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার তিনটি পরস্পর-সংযুক্ত স্তম্ভ। এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই আয়োজন সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক। দক্ষতা উন্নয়নের নীতি ও প্রশিক্ষণ কাঠামো যেন লিঙ্গ-সংবেদনশীল ও নারী-কেন্দ্রিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। নারীকে বাদ রেখে বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পুরোপুরি কাজে লাগানো কখনোই সম্ভব নয়।’’
ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, ‘‘এনএসডিএ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে কোনও নারী পিছিয়ে থাকবে না, নারীদের দক্ষতা ও সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে এগিয়ে নেয়া হবে। এই আয়োজনের মাধ্যমে যে সুপারিশগুলো ওঠে এসেছে, তা নীতি প্রণয়ন এবং নারীদের ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ শিল্প ও সৃজনশীল খাতে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। এনএসডিএ তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করবে।’’
ড. আন্দ্রেয়াস কুক বলেন, ‘‘হারআইজন ফেস্ট নারীদের দক্ষতা ও কর্মসংস্থানকে উদযাপন করছে, যেখানে বাংলাদেশের নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। লিঙ্গ-সংবেদনশীল প্রশিক্ষণ এবং সমান সুযোগ প্রচারের মাধ্যমে, এই উৎসব দেখিয়েছে যে নারীর ক্ষমতায়ন দেশের জন্য নতুন সুযোগের দিগন্ত প্রসারিত করে। এই অনুপ্রেরণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’’
এবারের আয়োজনে নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং ইউনিসেফের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ভোকেশনাল এডুকেশন এবং ভবিষ্যৎ দক্ষতা নিয়ে অভিজ্ঞতা ও সুপারিশ শেয়ার করেন। দুই দিনের ফেস্টে ৪৫০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
ফেস্টের সমাপনীতে আয়োজন করা হয় উদ্ভাবন ও নেতৃত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘আইডিয়া মার্কেটপ্লেস’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা নারীর সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হারআইজন ফেস্ট নারীর দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, লিঙ্গ সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়নের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা যায়।