দেশের প্রথম ক্রিকেট গেমিং অ্যাপ ‘হাউজ্যাট মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’
ক.বি.ডেস্ক: চালু হল সম্পূর্ণ বাংলাদেশে তৈরি প্রথম লেজেন্ডারী ক্রিকেট গেমিং অ্যাপ ‘‘হাউজ্যাট-মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’’। মুশফিকুর রহিমকে ব্র্যান্ডিং করে গেমিং অ্যাপটি যৌথভাবে তৈরি করেছে কেপিসি এন্টারপ্রাইজ ও টারটেইল সলিউশন্স। প্রতিষ্ঠান দুটির ৮জন প্রোগ্রামার প্রায় ৫মাস ধরে তৈরি করেছে এই অ্যাপটি। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
হাউজ্যাট-মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল: গেমিং অ্যাপটিতে ক্রিকেটের প্রায় সবধরনের ব্যাটিং স্ট্রোক এবং বোলিং অ্যাকশানযুক্ত করা হয়েছে। রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মোডিউল: জেনারেল, মাল্টিপ্লেয়ার এবং লিজেন্ডারি মোড।
জেনারেল মোডে একজন ইউজার বেছে নিতে পারবেন প্রতিপক্ষ দেশ; যার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন তিনি। মাঠে নামবেন মুশফিক হয়ে। বেছে নিতে পারেন পছন্দের টুর্নামেন্ট, খেলার মাঠ। আছে দিন-রাতের ম্যাচ, আবহাওয়া, টস, রিভিউ সিস্টেম, থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত এবং ধারাভাষ্যকারের বর্ণনা। সব মিলে শতাধিক অপশন আর ফাংশন। ঘরে বসে মাঠের অনুভূতি দেবার জন্য যুক্তকরা হয়েছে হাইডেফিনেশন গ্রাফিক্স।
গেমটির মাল্টিপ্লেয়ার মোডে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সুযোগ আছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে থাকা বন্ধুদের নিয়ে সেখানে চার বা আট জনের টিম তৈরি করা যাবে। তারা নিজেদের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে এবং চাইলে সেটা সরাসরি নিজের ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারবে।
হাউজ্যাট-মুশি দ্য ডিপেন্ডেবলের সবচেয়ে আকর্ষনীয় মোড হলো লিজেন্ডারি মোড। তারকা মুশফিকুর রহিম তার ক্যারিয়ারে এমন অনেক ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তিনি প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটি একাই জিতিয়ে এনেছেন। লিজেন্ডারি মোডে একজন ইউজার এমন একটি জায়গা থেকে খেলা শুরু করবেন যেখান থেকে জিতে আসা বেশ কঠিন। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জটি মাথায় নিয়ে তাকে মুশফিক হয়ে মাঠে নামতে হবে। রিয়েল টাইম ক্রিকেটের সঙ্গে মিল রেখেই ভার্চুয়াল জগতের জন্য তৈরি এই গেমটি খেলা যাবে অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই।
মানুষের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা পেতে গেমিং অ্যাপটির একটি বেটা ভার্সন গুগল অ্যাপ স্টোরে আপলোড করা হয়। মাত্র ২৪ ঘন্টায় এক লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রিপশনযুক্ত হয় এই অ্যাপটির এবং এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ লক্ষ বার খেলা হয়েছে গেমটি।
গতকাল শুক্রবার (১ অক্টোবর) ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে হাউজ্যাট-মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল গেমিং অ্যাপটির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য তারকা মুশফিকুর রহিম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গেমিং অ্যাপটির নির্মাতা ও উদ্যোক্তা কেপিসি এন্টার প্রাইজের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান, গেমিং অ্যাপটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও টারটেইল সলিউশন্সের চেয়ারম্যান খান রিফাত সালাম এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, আমি খুবই খুশি এবং চমকপ্রদ যে বাংলাদেশে এত সুন্দর গেমস তৈরি করা হয়েছে এবং দেশের ছেলেরা একটা গেমিং অ্যাপ তৈরি করেছে। আমি দেখলাম এটা একটা বিশ্ব মানের গেম। মুশফিকুর রহিম যেভাবে আমাদের দেশকে অনেক জয় এনে দিয়েছেন, আগামী দিনে তার নেতৃত্ব গেমিং বিশ্বেও আমরা নেতৃত্বে দিতে পারি আমি এই প্রত্যাশা করছি। অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের গেমিংয়ের বাজার তৈরি হবে এবং লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এজন্য আইসিটি ডিভিশন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
মুশফিকুর রহিম বলেন, আমার নামে যখন একটা গেম শুরু হলো তখন আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। আমার মনে হচ্ছে এই গেমের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন একটা যুগের সূচনা হচ্ছে। আমি সেই আশাই করছি। এর মাধ্যমে সবাইকে একটা সুস্থ্য বিনোদনের সুযোগ করে দিয়েছে। এই গেমস থেকে প্রাপ্ত অর্থের দুই শতাংশ মুশফিক ফাউন্ডেশনে যাবে।
আমিনুল হাকিম বলেন, যারা গেম ডেভলপার, আমি তাদের সবসময় এগিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তাইতো গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন কোন মানুষ গেম ডেভেলপমেন্টে এগিয়ে যেতে পারে, আমরা সর্বস্তরে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি করেছি।
কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, আর কিছু দিনের মধ্যেই মাল্টিপ্লেয়ার গেম হয়ে যাবে মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল। তখন আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারবো। এই গেমসটা বানিয়েই আমরা এখানে থেমে থাকবো না। আমরা আগামীতে আরও নতুন কিছু আপনাদের উপহার দিবো। আমরা এই গেমিং অ্যাপ নিয়ে টুর্নামেন্ট রাখবো। কেউ যদি টুর্নামেন্ট জিতে, তাহলে আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করবো, পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকবে।
খান রিফাত সালাম বলেন, এই গেমের পেছনে ১৮ মাসের রিসার্চ কাজে লেগেছে। নিরলস পরিশ্রম করেছে বাংলাদেশের আট গেম ইঞ্জিনিয়ার। টার্টেল গ্রুপ বিভিন্ন দেশে কাজ করছে এখন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বাজার হয়ে যাবে, তখন যেন অন্তত ১ শতাংশ আমাদের দেশের কন্ট্রিবিউশন থাকে।