তরুণদের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ
ক.বি.ডেস্ক: সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সেটি বাস্তবায়নে বর্তমান তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেবে। এজন্য তাদেরকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে। ৩/৩ ফর্মুলেশনে সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়ার সমন্বয় ঘটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেসিস সফটএক্সপোর দ্বিতীয় দিনে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের বক্তারা এসব কথা বলেন।
মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আলোচক ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইন্ডাস্ট্রি, একাডেমিয়া ও সরকারের মধ্যে ত্রিমাত্রিক বন্ধন তৈরির মাধ্যমে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন ও গবেষনার সুযোগ সৃষ্টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিবেটর স্থাপনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলে এই অভিযাত্রাকে টেকসই করা হচ্ছে। আমরা ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স, এআই, মেশিন লার্নিং, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং ও সাইবার সুরক্ষা নিয়ে ল্যাব স্থাপন করবো। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেন্টার ফর ফোর আইআর স্থাপন করবো। ৪১ সাল নাগাদ আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তুলবো।
মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি। আমরা যদি আমাদের সম্ভবনাময় তরুণদের কাজে লাগাতে পারি তাইলে স্মার্ট বাংলাদেশও বাস্তবে রূপ নিবে। কৃষিকে আমরা আধুনিক করেছি। কৃষিকে আমরা সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাব। কৃষকদের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে জমির প্রকার কেমন, জমিতে কী ফসল হবে, কীভাবে উৎপাদন করতে হবে সব তথ্য পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা তাদের সমস্যা নিয়ে কৃষিবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এ ছাড়াও এই কার্ড দিয়ে কৃষক বাণিজ্যও করতে পারবে। আমরা কৃষিটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তরিত করতে চাই। বীজ বোনা থেকে শুরু করে বিপণন তথা ভোক্তার কাছে নিয়ে যেতে প্রতিটি ধাপে ডিজিটালাইজেশনের দরকার হবে। সেটাকেই আমরা বলছি স্মার্ট এগ্রিকালচার। এক্ষেত্রে বেসিস অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই এগিয়ে চলায় বেসিস অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদেরকে জানতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ কি? যখন একজন কৃষকও সেটি জানতে পারবেন তখন তিনিও হয়ে উঠবেন স্মার্ট নাগরিক। আমাদের অনেক আইসিটি বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। বেসিস সে জায়গায় কাজ করতে পারে। প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করা উচিত না। এক সময় মানুষ কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতো, এখন তা কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। কাজেই স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা হতে হবে তাৎক্ষণিক। আমাদের প্রধান লক্ষ্য গ্রাহক। তাদের সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্যই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। প্রযুক্তি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ অতিদ্রুত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো, ঠিক যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে একসঙ্গে ছিলাম। স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণার পাশে থাকার দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এখানে আমাদের শিল্পের সক্ষমতা দেখানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরছি। নতুন প্রজন্ম যেনো বুঝতে পারে তারাও যেন অংশ নিতে পারে সেই চেষ্টাটাই করেছি। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বেসিস বিশ্বাস করে, শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা সম্ভব। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়া এই তিনটি স্টেকহোল্ডার সমন্বিতভাবে তিনটি কাজ করলেই সেটি সম্ভব হবে। কাজগুলো হলো- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োগ।