ঢাকায় শুরু হলো এসএটিআরসি এর ২৪তম বার্ষিক সম্মেলন
ক.বি.ডেস্ক: টেলিকম খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও বহুপক্ষীয় অংশীদারিত্বের ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব নিশ্চিতের লক্ষ্যে সার্কভুক্ত ৯টি দেশের অংশগ্রহণে তিন দিনব্যাপী (৩-৫ অক্টোবর) শুরু হলো দক্ষিণ এশিয়ার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলের (এসএটিআরসি) ২৪তম বার্ষিক সম্মেলন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি (এপিটি) এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।
আজ (৩ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এসএটিআরসি এর ২৪তম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।
সভাপতিত্ব করেন ইরানের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান আলি রেজা পেহলভী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি’র মহাসচিব ম্যাসানরি কোন্দ এবং এসএটিআরসিএ’র নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বৈষম্য ঘুচতে বাংলাদেশ তৃণমূলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে। এজন্য ৯টি অ্যাকশন প্লান তৈরি করেছে। ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে এসএটিআরসি অংশীদেশগুলোর মধ্যে টেলিযোগাযোগে বেস্ট প্রাক্টিস বাস্তবায়ন করবে। সুযোগগুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে ডিজিটাল সংযুক্তিকে ভবিষ্যতের জন্য টেকসিই উন্নয়নমূলক অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সমতা সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। টেলিকম খাতের টেকই উন্নয়ন ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই খাতের সকল প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সম্মেলনটি বাংলাদেশের বিকাশমান রূপান্তরে দারুণ ভূমিকা পালন করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের যে অর্জনগুলো আমরা চাই এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সংযুক্তি। দেশের ৯৮ শতাংশ এলাকা ফোরজিতে সংযুক্ত। এখন ৫জি’র জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ডিজিটাল সংযুক্তি চমৎকারভাবে সমন্বিত করে বিটিআরসি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমার প্রত্যাশা, আমরা ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাকবোন তৈরির পাশাপাশি অবশিষ্ট অংশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করবো। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমরা যেমন নেবো, তেমনি অন্যরাও আমাদের অভিজ্ঞতা নেবে। কেননা বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, দেড় যুগে টেকসই ও উদ্ভাবনী টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে একটি আঞ্চলিক অ্যাকশন প্লান গ্রহণে দুইটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি এরই মধ্যে আঞ্চলিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে। তার ওপর ভিত্তি করেই সাজানো হয়েছে তিন দিনের কর্মসূচি। ফলে আশা করা যায় কাউন্সিল মিটিং খুবই ফলপ্রসু হবে।
১৯৯৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে SATRC (এসএটিআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থা বেতার তরঙ্গ সমন্বয়, স্টান্ডার্ডাইজেশন, রেগুলেটরি প্রবণতা, টেলিযোগাযোগ খাত উন্নয়নের কৌশল এবং টেলিযোগযোগ সংক্রান্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে কর্মকৌশল নির্ধারণ করে থাকে। সদস্য দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতি বছর এ কাউন্সিলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসএটিআরসি এর সহযোগী সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অংগ্রহণ করবে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ, বাংলালিংক ডিজিটাল, গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, জিএসএমএ (হংকং), হুয়াইয়ে টেকনোলজিস, টেলিনর এশিয়া, টেলিনর পাকিস্তান, ইনমারসেট সিংগাপুর, আইটিইউ-এপিটি ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া, নোকিয়া সলিউশনস অ্যান্ড নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া এবং থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড কমপিউটার টেকনোলজি সেন্টার।
তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এসএটিআরসি এর ২৪তম বার্ষিক সম্মেলনে সর্বমোট ৯টি সেশন, দুটি গোলটেবিল বৈঠক এবং দুটি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন সেশনে টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যত, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে প্রবেশ ও গুনগত মান, ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা, স্যাটেলাইট ও টেরিস্ট্রিয়াল সেবায় তরঙ্গ ব্যবহার ও ৫জি প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ও কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।