ডিএনসিসি’র ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ অ্যাপ চালু
ক.বি.ডেস্ক: সিটি করপোরেশন এলাকায় কোথায় গাড়ি রাখার ফাঁকা জায়গা আছে তা জানাতে ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ অ্যাপ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে ডিএনসিসি’র এই স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ। নগরীতে গাড়ি পার্কিংয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের কোনো অ্যাপ চালু হলো।
‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ অ্যাপ চালুর ফলে, যেখানে–সেখানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ হবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোর থেকে ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ নামে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে গুলশান এলাকার আটটি সড়কে ২০২টি স্পটে স্মার্ট পার্কিং চালু করা হয়েছে।
ঘণ্টাপ্রতি টাকা পরিশোধ করে অ্যাপের মাধ্যমে সড়কের পাশে পার্কিংয়ের এই ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি। এতে যত্রতত্র পার্কিং দূর হবে। অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ির মালিক বা চালক আশপাশে কোথায় পার্কিং স্লট ফাঁকা আছে তা দেখতে পাবেন। পরে সেখানে গিয়ে অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ তাদের গাড়ি পার্ক করতে পারবেন।
আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসি’র নগরভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসি’র মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম।
নির্দিষ্ট ফি দিয়ে যে কেউ স্পটগুলোতে গাড়ি পার্ক করতে পারবেন। অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কার, জীপ ও মাইক্রোবাসকে প্রথম ২ ঘণ্টায় দিতে হবে ৫০ টাকা। পরবর্তী ৩য় ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা এবং ৪র্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় দিতে হবে ১০০ টাকা। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রথম ২ ঘণ্টার ফি ১৫ টাকা। পরবর্তী ৩য় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং ৪র্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা করে ফি দিতে হবে। পার্কিং ফি প্রযোজ্য হবে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পার্কিংয়ে কোনো ফি লাগবে না। আর শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন পার্কিং করা হয়েছে ফ্রি।
মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও আজ মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায় আছেন ও বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তার একটি কারণ হলো আমরা ডিজিটাল। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ ডিএনসিসিতে স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট এডুকেশন এবং স্মার্ট গভর্ন্যান্স দরকার। সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হবে। তেজগাঁও এলাকাকে যত দ্রুত সম্ভব স্মার্ট পার্কিং-এর আওতায় আনবেন, যেন বাস ও ট্রাক সুষ্ঠুভাবে পার্ক করা যায়।’
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসি’র এলাকায় স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় মিয়ামি সিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। সকলের সহযোগিতায় এটি সফল হবে। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটির প্রতিটি এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে মাল্টি লেভেল পার্কিং ১৫০টি গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করার জন্য আমাদের যত বড় বড় অফিস রয়েছে সেখানে গাড়িগুলোকে ভবনের ভেতরে আনার সব চেষ্টা আমরা করছি। দেখা যায়, নো পার্কিং বললেও আমরা কোথায় পার্ক করতে হবে তা বলি না। স্মার্ট পার্কিংয়ের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধানের জন্য সামান্য খরচ ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে। আমাদের তরফ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে।’
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘বিরোধীদল সহিংসতা করছে আর আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করছে। কিন্তু তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোপাগান্ডা মেশিনের মাধ্যমে তারা নানারকম প্রচারণা চালায়। আমরা উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি আর তারা ধ্বংস চালাচ্ছে।’
যেভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপেল অ্যাপ স্টোর থেকে ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপটি ওপেন করে ক্রিয়েট এন অ্যাকাউন্ট বাটনে ক্লিক করতে হবে। অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট পেজে যাওয়ার পর নিজের এবং গাড়ির তথ্য দিয়ে ফরমটি পূর্ণ করতে হবে এবং সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ওটিপি ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধটি সম্পন্ন হবে।
স্মার্ট পার্কিং সেবা ব্যবহার
প্রথমে ফুটপাতে সাদা রঙ চিহ্নিত স্থানে গাড়িটি প্যারালাল বা ৬০ ডিগ্রিতে পার্ক করতে হবে। এই পার্কিংটি অ্যাপ অথবা স্মার্ট পার্কিং কার্ড ব্যবহার করে বৈধতা নিশ্চিত করে নিতে হবে। দুটি পদ্ধতিতে এটি ব্যবহার করা যাবে। প্রথম পদ্ধতিতে- অ্যাপ ব্যবহার করে পার্কিং নিশ্চিত করতে অ্যাপ-এ প্রবেশ করে এবং রাস্তাটি নির্বাচন করে ‘পার্কিং’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর যে কোনো একটি স্থান এবং ঘণ্টা অনুসারে গাড়ি রাখার সময় নির্বাচন করে নিতে হবে। এরপর নির্বাচিত ঘণ্টা অনুসারে সফটওয়্যারটি পার্কিংয়ের চার্জ প্রদর্শন করবে এবং উক্ত চার্জ যে কোনো অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে দেওয়া যাবে। চার্জ দেওয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে পার্কিং সেবাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে- স্মার্ট পার্কিং কার্ড ব্যবহার করে
প্রথম অবস্থায় একটি ‘স্মার্ট পার্কিং কার্ড’ সংগ্রহ করতে হবে। স্মার্ট পার্কিং কার্ডটি রাস্তায় থাকা ওয়ার্ডেনের বা ইসলামী ব্যাংকের গুলশান, বনানী শাখা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। প্রথমবারের মতো এই স্মার্ট পার্কিং কার্ডটিতে ব্যবহারকারীর তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করে নিতে হবে ইসলামী ব্যাংক গুলশান, বনানী শাখা থেকে। দ্রুত সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংকের শাখা থেকে নিবন্ধিত স্মার্ট পার্কিং কার্ডে কিছু টাকা রিচার্জ করে রাখতে হবে।
গাড়ি পার্কিং করার পর স্মার্ট পার্কিং কার্ডটি ওয়ার্ডেনকে দিলে এবং একজন কত ঘণ্টা পার্কিং করবে তা উল্লেখ করতে হবে/ ওয়ার্ডেন তার হাতে থাকা পিওএস (পস) মেশিনের মাধ্যমে স্মার্ট পার্কিং কার্ড থেকে গাড়ির পার্কিং পেমেন্ট সংগ্রহ করবেন এবং একটি রসিদ দেবেন।