টেলিনর’র ‘টেক ট্রেন্ডস ২০২২’ উন্মোচন করলো গ্রামীণফোন
ক.বি.ডেস্ক: টেলিনর গ্রুপের সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইউনিট ‘টেলিনর রিসার্চ’ এর প্রযুক্তি নিয়ে পূর্বাভাসের প্রতিবেদনের সপ্তম সংস্করণ উন্মোচন করেছে। এ প্রতিবেদনে কীভাবে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশন গ্রিন ট্রান্সফরমেশনকে (সবুজ রূপান্তর) সক্ষম করে তুলতে পারে এর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, আগামী দিনে এই বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি) জিপি হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিনরের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করে গ্রামীণফোন। চলতি বছরের জন্য পাঁচটি প্রত্যাশিত প্রযুক্তি পূর্বাভাস উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন প্রধান অতিথি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক। মূল বক্তব্য প্রদান করেন টেলিনর রিসার্চ’র প্রধান বিওন তালে স্যান্ডবার্গ। বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, বিকাশ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং আমাদের ইকোসিস্টেমের ওপর এর প্রভাব ছিল ২০২২ সালে প্রযুক্তি পূর্বাভাসের মূলে। এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, কীভাবে নতুন যুগের উন্নত কানেক্টিভিটি, জলবায়ু-বান্ধব শক্তি-সাশ্রয়ী আধুনিক হার্ডওয়্যার, এজ ক্লাউড এবং ফাইভজি প্রযুক্তি আরও পরিবেশ বান্ধব হবে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রিন জব স্কিলস এর চাহিদা এবং ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্লাইমেট মাইক্রো ডিগ্রি দেয়ার বিষয়গুলোকে বাড়িয়ে তুলবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শক্তি-সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব ডিভাইস তৈরি করার প্রতিযোগিতা ও প্রবণতা বাড়বে। এ ছাড়াও আগামী প্রজন্মনের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রেট রেসিগনেশন এর সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো এবং বৈশ্বিক মহামারি শেষ হলে কেমন করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিবেদনে তিনটি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক মহামারি ও এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই এ পূর্বাভাসগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেলিনর রিসার্চ সপ্তমবারের মতো টেক ট্রেন্ডসের মাধ্যমে সামনের দিনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পূর্বানুমান উন্মোচন করেছে। এ প্রতিবেদনে পূর্বানুমান করার কারণ ও এর ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বের প্রযুক্তি দুনিয়ায় কী ঘটছে তা উন্মোচন করতে পারছি এবং এগুলো বাতসরকিভাবে প্রণীত কৌশলেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি।
মো. নাসিম পারভেজ বলেন, টেক ট্রেন্ডস থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নিয়ে কাজ করতে কিংবা এগুলোর বিকাশে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায় তা নিয়ে আমাদের কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। আমরা ফাইভজি নীতিমালা নিয়ে কাজ করছি। আমরা অপারেটরদের সঙ্গে বসে তাদের পরামর্শও নিচ্ছি। গ্রামীণফোনের হ্যান্ডসেট রিসাইক্লিং উদ্যোগ বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে তিনি মনে করেন।
কামাল কাদীর বলেন, টেক ট্রেন্ডস ২০২২ এর পাঁচটি পূর্বাভাসে অনেকগুলো ধারণা খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। সার্ভার ও অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক কোন কিছু ডিজাইন করার সময় সবুজায়নের বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়গুলোকে মূল ডিসিপ্লিন হিসেবে বিবেচনা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রিনফ্লুয়েন্সার ধারণাটি আমাদের দেশে অতি শ্রীঘ্রই জনপ্রিয় করতে সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর এভাবেই একসঙ্গে সবাই কাজ করার মাধ্যমে আমরা শক্তি সাশ্রয়ীর বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে টেকসই পৃথিবী গড়তে পারবো।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্তমানে ই-বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ই-বর্জ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে এবং এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তা সঠিকভাবে জানি না। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোক্তাদের আকর্ষণ করতে নতুন ডিজাইন বাজারে আনার চেয়ে পরিবেশের জন্য কিছু করতে চাইলে পণ্যের স্থায়িত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া, আরেকটি বিষয় হচ্ছে মানুষের সুরক্ষা। নেটওয়ার্ক টাওয়ারের বিকিরণ যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ না হয় সে ব্যাপারে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন হতে হবে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশ-বান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারি। এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেনিং সেন্টারকে ক্লাইমেট মাইক্রো ডিগ্রি ও কোর্সের ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করা যায় কোর্সগুলোর মাধ্যমে মানুষ তা শিখতে পারবে।
বিয়ন টালে স্যান্ডবার্গ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবক্ষয় নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনুধাবন করে সর্বত্রই মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। প্রযুক্তি কীভাবে সমস্যার অংশ না হয়ে পরিবর্তনে সহায়তা করতে পারে টেলিনরে তা অনুধাবন করাটাই আমাদের জন্য জরুরি।
ইয়াসির আজমান বলেন, ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- জলবায়ু-বান্ধব কৌশল গ্রহণ করা, যা সবুজে রূপান্তরের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখবে। এ বছর প্রযুক্তি সংক্রান্ত অনুমান দেখিয়েছে যে, কীভাবে প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশন ডেটা স্থানান্তরকে আরও দক্ষ, সহজ এবং আমাদের ডিভাইসগুলোকে আরও পরিবেশ বান্ধব ও অপটিমাইজ করে তুলবে, ডিজিটাল মাইক্রো ডিগ্রি ও গ্রিন ইনফ্লুয়েন্সারগুলোর মাধ্যমে জলবায়ুতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে; পাশাপাশি টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণেও কিছু ট্রেন্ড ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা কীভাবে ভাল নেতৃত্বের অনুশীলনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কর্মীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করে, এ বিষয়টিও চলতি বছরের প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে।