ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার
ক.বি.ডেস্ক: দেশের ওটিটি (ওভার দ্য টপ স্ট্রিমিং) প্ল্যাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার। তাদের সে অধিকার রক্ষা করতে হবে সরকারকে। এখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা সরকারের কোনো সংস্থার পক্ষে সমীচীন হবে না। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে টেলিভিশন সেবা প্রদান শুরু হলেও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিষয়ে কোনো ধরনের নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। এটি সরকারেরই ব্যর্থতা।
গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
আলোচনায় সাবেক সচিব ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, “আমরা পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছি অর্থনৈতিকভাবে। বর্তমানে ইন্টারনেট আমাদের মৌলিক অধিকার। তাই ইন্টারনেটে লাইভ টেলিভিশন দেখতে চাওয়া বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টিভি দেখতে চাওয়া গ্রাহকের অধিকার। এখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা সমীচীন নয়। ওটিটিতে লাইভ টিভি বন্ধ করা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। সরকারের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেটে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।”
আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, “অন্যান্য দেশে আগে পলিসি তৈরি হয় তারপর গ্রাহক তৈরি হয় কিন্তু আমাদের দেশে হয় উল্টোটা। এখানে গ্রাহক আগে তৈরি হয়, তারপরে সমস্যা তৈরি হয় লাইসেন্সধারীদের মাঝে, পরবর্তীতে পলিসি তৈরি হয়। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্ম কী আপনি বন্ধ করতে পারবেন? কেবল ব্যবসায়ীদের ৭০ ভাগ অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের ইন্টারনেট ব্যবসা করার আইনগত অধিকার নেই অথচ তারা করছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না কিন্তু তারা আমাদের ইন্টারনেট ব্যবসার মধ্যে হস্তক্ষেপ করছে যা মোটেও কাম্য নয়। পৃথিবীর কোন দেশেই ইন্টারনেট আর কেবল ব্যবসা আলাদা করা নাই এই সিস্টেম একমাত্র বাংলাদেশে আর এসব কারণেই অতিরিক্ত তারের জঞ্জাল।”
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালিদ আবু নাসের বলেন, “২০১৯ সালে বিশ্বে ওটিটি ব্যবসা ছিল ১২১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালে বিশ্বব্যাপী এ বাজার দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৩৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ২০৩০ সাল নাগাদ ১ হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড়াবে। তাই খুব দ্রুততার সঙ্গেই এ খাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করে সম্ভাবনা নিয়ে ভাবা জরুরি। আইনবিধি ছাড়া এভাবে প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়া বাজার প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ এর ২৭ ধারা পরিপন্থী।”
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিশ্বে ইতিমধ্যে ৪২টি দেশে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যেখানে সরকার ঘরে ঘরে শতভাগ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে, সে সময় তিন কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে ওটিটি প্লাটফর্মে লাইভ টিভি দেখা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখন আর ডিশ কেবলের মাধ্যমে গ্রাহক টেলিভিশন দেখতে চায় না। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার করে সব কিছু পরিচালনা করা যায় তাই দুটি সেবা ক্রয় করতে গ্রাহক আগ্রহী নয়। যেখানে ফেসবুক সরকারের লাইসেন্সধারী না হয়েও বিশাল রেভিনিউ নিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের বৈধ লাইসেন্সধারীদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে লাইভ টিভি দেখাতে না দেয়া খুবই দুঃখজনক।”
এ সময় আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিলা রহমান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।