এমন এক সময় আসবে ভয়েস কল বিলীন হয়ে যাবে: মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার
ক.বি.ডেস্ক: ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ইন্টারনেট এখন শহরের গণ্ডি অতিক্রম করে দুর্গম অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান চাহিদা। মানুষের এই চাহিদা পূরণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইভারের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছি। একদেশ একরেটের মাধ্যমে দেশে এখন এক এমবিপিএস ইন্টারনেট মাত্র ৬০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছি। ইন্টারনেট সহজলভ্যতার কারণে দেশে ভয়েস কল ক্রমেই কমে আসছে এবং ডেটা কল বাড়ছে। এমন এক সময় আসবে ভয়েস কল বিলীন হয়ে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে আইএসপিএবি আয়োজিত নেটওয়ার্ক অ্যান্ড এডভান্সড বিজিএফ রাউটিং বিষয়ক তিন দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং আইবিপিসি’র যৌথ উদ্যোগে অ্যাডভান্স বিজেপি রাউটিং অ্যান্ড আইএক্সপি এবং আরপিকেআই, ডিডিওএস এবং নেটওয়ার্কিং সিকিউরিটির ওপর দু’টি ট্রেনিং প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান এবং বিটিআরসি’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এহসানুল কবির। বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়া এপনিক প্রশিক্ষক ডেভিড মিচেল পালান এবং আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা অত্যাবশ্যক। এ বিষয়ে সরকার অত্যন্ত মনোযোগী। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন-৬ (আইপিভি৬) প্রযুক্তি অপরিহার্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইপিভি-৪ ভার্সনের রাউটার আমদানি রহিত করা হয়েছে। আইপিভি ৬ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মাফিক কাজ চলছে। উচ্চগতির ইন্টারনেট গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার অন্যতম প্রধান শক্তি আপনারা। সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও এর কারিগরি বিষয়সমূহ নিয়ে গ্রাহকদের সচেনতার দায়িত্ব রয়েছে আপনাদের।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আপনি আজ যা শিখছেন আগামীকাল তা কাজে নাও লাগতে পারে। এজন্য প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনাকেও এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। মানুষ যদি যন্ত্রের পিছনে না থাকে তাহলে সে যন্ত্র অকেজো। এই প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষার্থীরা যখনই প্রশিক্ষণ থেকে জ্ঞান নিয়ে যন্ত্র চালনায় পারদর্শী হবে, তখনই কেবল যন্ত্র সচল থাকবে। সার্টিফিকেট দিয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায় না, কেবল প্রশিক্ষণ এবং হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করা যায়।
আইএসপিএবি’র পক্ষ থেকে দুটি দাবি বিশেষ করে অ্যাক্টিভ শেয়ারিং এবং আইএসপি ইন্ডাস্ট্রিকে আইটিইএসের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টির ব্যাপারে তার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এবং তার প্রচেষ্টা অভ্যাহত থাকবে বলেও জানান। বারবার ডিও লেটার দেয়ার পরও আইএসপিএবি’কে আইটিইএস এর অন্তর্ভূক্ত না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও এটা বাস্তবায়িত হয়নি।
আব্দুর রহিম খান বলেন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এখন আর অস্ত্রের ওপর নয়; নেটওয়ার্কের সুরক্ষার ওপরই নির্ভর করে । ট্রেনিং ল্যাব স্থাপনে বিপিসিকে সহযোগী হিসেবে রাখার মাধ্যমে আইএসপিএবি আমাদের ভালো কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আগামীতেও বিভিন্ন বিভাগে নিক্স এর পপ তৈরিতে সাধ্য মতো সহযোগিতা করবো। এ বছরের মধ্যেই তিন বিভাগে নিক্স স্থাপনে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
এহসানুল কবির বলেন, ২০২৩ সালে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার হবে ৬০০০ জিবিপিএস। ২৫ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে সাড়ে ৮ হাজার এবং ৩০ সালের মধ্যে ১৯ হাজার জিবিপিএস। আপনারাই এই ব্যান্ডউইডথ রাটিং করেন। ‘ইন্টারনেট এখন ষষ্ঠ মৌলিক চাহিদা, দেশের এখন ১০ শতাংশই আইপিভি ৬। ২০১৯ সালে অ্যাক্টিভ শেয়ারিং ইস্যুটি স্থগিত হয়েছিলো। সেই স্থহিতাদেশ এখন নেই। এটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। শিগগিরই বাস্তাবায়িত হবে। এবং আইএসপিএবি’র বিভাগীয় শহরে নিক্স স্থাপন ও প্রসারের জন্য বিটিআরসি হতে পূর্ণ সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
মো. ইমদাদুল হক বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা এবং পরবর্তীতে ২০২২ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আইএসপি লাইসেন্সধারীদের লাইসেন্সের আপগ্রেডেশনসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও একটিভ শেয়ারিং চালু করার দাবি জানান এবং দেশের টেলিকম সেক্টরে এক্টিভ শেয়ারিং করা গেলে, আইএসপি ইন্ডাস্ট্রির জন্য কেন করা যাবে না- এই প্রশ্ন তুলে ধরেন তিনি। বিটিআরসি’র কাছ থেকে আমরা সবসময়ই বিভিন্ন সার্ভিস সংক্রান্ত সমস্যা হলে সব ধরনের সহায়তা পেয়ে থাকি। বিভাগীয় অঞ্চল খুলনায় ও চট্টগ্রাম বিভাগে ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ এর নতুন পপ স্থাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। আগামী ডিসেম্বরে আরও দুটি পপ স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ করা, এক্টিভ শেয়ারিং এর মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য বিটিআরসির সহযোগিতা কামনা করেন।
নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, লাইসেন্স আপডেটে ও একক্টিভ শেয়ারিং প্রদান করার জন্য জোর দাবি করেন। তা ছাড়া আইপিভিসিক্ম সরকারী সব ওয়েবসাইডে স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহন করলে এটি অতি দ্রুত ফলপ্রসু হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দশনা অনুযায়ী আইএসপি সেক্টরকে আইটিইএস এ বাস্তবায়নের জন্য সহযোগীতা কামনা করেন।
এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে আইএসপি, আইআইজি, ব্যাংক, টেলকো বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ জন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার অংশগ্রহণ করছেন। প্রশিক্ষণ ওয়ার্কশপে যোগদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিষয় ভিত্তিক দক্ষ ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিন দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক থাকছেন আর্ন্তজাতিক ট্রেনিং বিশেষজ্ঞ অ্যাপনিক ডেভিড মিচেল পালান, মো. আব্দুল আউয়াল, মো. আব্দুল্লাহ আল নাছের ও কাজী শামসাদ তাহমিদ। কর্মশালার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আইসিটি সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং নিরাপদে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রান্তিক মানুষের নিকট সহজেই পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে র্স্মাট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। ১২ আগস্ট প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরন করা হবে।