সাম্প্রতিক সংবাদ

এআই প্রযুক্তির সমন্বয়ে গাজীপুরে অনারের প্রথম উৎপাদন কেন্দ্র চালু

ক.বি.ডেস্ক: বৈশ্বিক এআই ডিভাইস ইকোসিস্টেম ব্র্যান্ড অনার বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে অত্যাধুনিক কারখানা চালু করেছে। এর মাধ্যমে দেশের ভেতরে স্থানীয় উৎপাদন কার্যক্রমের সূচনা করল ব্র্যান্ডটি। স্মার্ট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের হাত ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে অনার দেশে তাদের পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিল। এখানে সংযোজিত ডিভাইসগুলো খুব শিগগিরই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেল নিয়ে দেশের বাজারে আসছে।

আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে অবস্থিত স্মার্ট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে অনার এর উৎপাদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বিটিআরসি-এর পরিচালক মো. নূরন্নবী, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অনার এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জর্জ ঝেং, গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেরিক ডেং, স্মার্ট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, অনারের কান্ট্রি ম্যানেজার ল্যাং গুও, হেড অব বিজনেস আবদুল্লাহ আল মামুন ও ডেপুটি কান্ট্রি ম্যানেজার মুজাহিদুল ইসলাম।

বাংলাদেশে বৈশ্বিক এআই উদ্ভাবন ও স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতার সমন্বয়ে উৎপাদন উৎকর্ষের নতুন এক মানদণ্ড স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে স্থাপন করেছে অনার। নিজেদের স্মার্ট ডিভাইসগুলোতে উন্নত এআই প্রযুক্তি সংযোজনের জন্য বাজারে পরিচিতি রয়েছে অনারের। বাংলাদেশে উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে ব্র্যান্ডটি। কারখানায় যন্ত্রাংশ সংযোজনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোতে এআই প্রযুক্তিচালিত অটোমেশন ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে নির্ভুলভাবে ও কার্যকরী উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে কারখানাটি একটি প্রোডাকশন লাইন দিয়ে প্রতিদিন ১,৫০০ ইউনিট উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে পরিচালিত হবে। এ ছাড়া, প্রথম বছরের মধ্যেই অনার চারটি প্রোডাকশন লাইন চালুর পরিকল্পনা করেছে, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমাদের নিজেদের দক্ষতার যে ঘাটতি রয়েছে, তা কমাতে হবে। ডিভাইসের সহজলভ্যতা আরও বাড়াতে হবে, পাশাপাশি তরুণদের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে। স্মার্ট ও অনার বাংলাদেশে অর্থবহ কর্মসংস্থান তৈরির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নের দিকে সত্যিকার অর্থেই একটি বড় পদক্ষেপ নিল।”

তিনি আরও বলেন, “এই কারখানা লাইনগুলো বাস্তবিক অর্থেই কর্মসংস্থানবান্ধব করে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে উল্লেখযোগ্য দক্ষ জনবল তৈরি হবে, দক্ষতা-বিনিময়ের সুযোগ বাড়বে।সরকার স্থানীয় মোবাইল ফোন বাজারকে শক্তিশালী করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা শিগগিরই অবৈধ স্মার্টফোন আমদানি মোকাবিলায় এনইআইআর এর কাজ শুরু করছি এবং শুল্ক কাঠামো সংস্কার করছি, যাতে স্থানীয় উৎপাদন আমদানির তুলনায় আরও আকর্ষণীয় হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ সাবমেরিন কেবল যুক্ত হওয়ায় ডেটার মূল্যও কমে যাবে।”

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের বাজারে অনার ফোন ইতিমধ্যে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে অনারের ফোন কিনতে চান। স্থানীয় এ চাহিদা মেটাতেই আমরা এই কারখানা স্থাপন করেছি। আমাদের প্রাথমিক উৎপাদনক্ষমতা ৬০ হাজার ইউনিট এবং চাহিদা বাড়লে তা আরও বৃদ্ধি করা হবে। নতুন স্থাপিত হওয়া কারখানা শুধুই একটি কারখানা বা ইটের স্থাপনা নয়; এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একক রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক প্রযুক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাংলাদেশের সক্ষমতারও প্রমাণ এটি।

জর্জ ঝেং বলেন, “এই কারখানা শুধুই একটি অবকাঠামো নয়। এটি অনার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এক অংশীদারিত্বের প্রতীক যেখানে বৈশ্বিক দক্ষতা ও স্থানীয় সক্ষমতার সম্মিলন ঘটেছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা নয়; এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে স্থানীয় পেশাজীবিদের দক্ষতা বিকশিত হবে, প্রযুক্তি অগ্রসর হবে এবং সম্প্রদায় আরও সমৃদ্ধ হবে। আমরা উৎপাদনে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সততার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার আমাদের অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করছি।”

অনারের এই এআই প্রযুক্তিনির্ভর কারখানাটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি স্থানীয় কর্মীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে। দেশের মধ্যেই এমন একটি উদ্যোগ আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং বৈশ্বিক ইলেকট্রনিকস সাপ্লাই চেইনে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতেও ভূমিকা রাখবে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *