ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডাম্পিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
ক.বি.ডেস্ক: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ই-বর্জ্যের কাচামাল কাজে লাগানোর বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। সিটি কর্পোরেশনসমূহকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। ই-বর্জ্য পুনরায় কী কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। এ জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরকেও ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডাম্পিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটা সম্ভব হলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ই-বর্জ্য প্রয়োজনে ডাকঘরের মাধ্যমে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে।
আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্ব ই-বর্জ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ভিশন ২০৪১ টাওয়ারে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ই-বর্জ্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ), জেআর রিসাইকেলিং সলিউশন লি. এবং এনএইচ এন্টারপ্রাইজের সহযোগিতায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই’র ইনোভেশন এবং রিসার্স সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইদ আলী, বি্সিএস সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, আইএসপিএবি’ সভাপতি মো. ইমদাদুল হক।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাক্কো’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন এবং বিসিএস’র সাবেক সভাপতি শাহীদ-উল-মুনীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআইইউ’র সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার। সঞ্চালনা করেন সার্ক সিসআই’র নির্বাহী সদস্য শাফকাত হায়দার। সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিআইজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা পারভীন, কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের সহ-প্রধান অধ্যাপক শেখ রাশেদ হায়দার নূরি, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং জেআর রিসাইকেলিং সলিউশনের জেনারেল ম্যানেজার মঞ্জুর আলম।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য (ই-বর্জ্য) পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। বিদেশ থেকে ব্যবহৃত পুরাতন কমপিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল আমদানি জাতীয় জীবনে স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি। আমরা দেশকে অন্য দেশের ই-বর্জ্যের ডাম্পিং পয়েন্ট হতে দিতে পারি না। এগুলো নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কী করে দেশে ঢুকছে তা খতিয়ে দেখতে হবে ও সেগুলোর বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য সূচিতে ই-বর্জ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি দক্ষ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অপরিহার্য। ই-বর্জ্যের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং করে এটিকে সম্পদে পরিণত করতে সমন্বিত উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ব্যবহৃত ব্যাটারি কিভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে সেই বিষয়টিও খুব্ই গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল কারখানা, মোবাইল অপারেটর এবং আইএসপিসহ বিটিআরসির লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্জ্য ফেরৎ নেয়ার বিধিবিধান যাতে যথাযথভাবে পালন করে এ বিষয়েও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আন্ডারগ্রাউন্ডে ক্যাবল লাইন স্থাপনের পাশাপাশি ভবন নির্মাণের সময় ভবনসমূহে ইন্টারনেটের ক্যাবল পরিকল্পিতভাবে যাতে সংযুক্ত করা যায় সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। ই-বর্জ্য ব্যস্থাপনা একটি কঠিন কাজ। সফলভাবে ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে সমস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য তা হবে অত্যন্ত কল্যাণকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশ পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বে যোগ্যতা অর্জন করেছে।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতার পাশাপাশি পণ্য প্রস্তুতকারীদের বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সঙ্গে ই-বর্জ্যের ঝুঁকি হতে পরিবেশ রক্ষায় আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। এই যাত্রাপথে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান বিশেষ করে স্মার্টফোন, কমপিউটার এবং গৃহস্থালী ইলেট্রনিক পণ্য। এসব পণ্য হতে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। অথচ সঠিক পদ্বতিতে এই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এই বর্জ্যই হতে পারে সম্পদ। এই সম্পদের বাজার প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কেবল সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা এই সম্পদের সুফল পাচ্ছি না। তাই প্রযুক্তিপণ্য বা ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট হওয়ার সময় এখনই।
