অন্যান্য মতামত

ই-কমার্সের প্রতারণা থেকে উত্তরণের উপায়

বাংলাদেশে অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, যার ফলে ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উভয়ের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। বাংলাদেশে ই-কমার্সে সাধারণত যেসব প্রতারণা বা জালিয়াতি হয়ে থাকে তার কিছু কৌশল বা নমুনা নিয়ে আজকের আলোচনা। লিখেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)…….

বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন: কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য পণ্যের বৈশিষ্ট্য, গুণগত মান নিয়ে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দেয় এবং নিন্মমানের পন্যে ডিসকাউন্ট বাড়িয়ে বিক্রি করে।

প্রতারণাপূর্ণ মার্কেটিং: বিভ্রান্তিকর কৌশলগুলো ব্যবহার করা, যেমন হিডেন চার্জ, অস্পষ্ট শর্তাবলি অথবা ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করার জন্য বোনাস বা গিফট এর মিথ্যা প্রোলভন দেখানো।

ডেটা গোপনীয়তা লঙ্ঘন: গ্রাহকের সম্মতি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা, যার ফলে গ্রাহকের ব্যাক্তিগত এসব তথ্য যে কোন সময় চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

ডেলিভারি সমস্যা: গ্রাহকদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করা সত্ত্বেও সময়মতো বা একেবারেই পণ্য ডেলিভারি করতে ব্যর্থ হওয়া। কিছু বিক্রেতা টাকা অগ্রীম নিয়ে পরে আর পন্য ডেলিভারি করে না। ক্রেতারা এমন পন্য পান যার কোয়ালিটি বিজ্ঞাপনে দেখানো পন্যের সঙ্গে কোন ভাবেই মিলে না।

নকল বা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা: আসল পন্যের ছবি ব্যাবহার করে নকল পন্য ডেলিভারি করা। নকল পণ্যের তালিকা তৈরি করে সেগুলো গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করতে আবার ডিস্কাউন্ট মূল্যে বিক্রি করে। বিক্রেতারা ক্রেতাদের প্রতারিত করার জন্য পণ্যের বৈশিষ্ট্য অথবা গুণকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরার চেষ্টা করে।

অন্যায্য রিটার্ন এবং রিফান্ড নীতি: কঠোর এবং অযৌক্তিক রিটার্ন এবং রিফান্ড নীতি প্রয়োগ করা, যা কিনা গ্রাহকদের রিফান্ড বা এক্সচেঞ্জ পাওয়া কঠিন করে তোলে।

মূল্য বৃদ্ধি: জরুরী পণ্যের জন্য অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করা, বিশেষ করে সংকট বা উচ্চ চাহিদার সময় এই কাজগুলো বেশি করা হয়।

ডার্ক প্যাটার্ন ব্যবহার করা: গ্রাহকদের মন মানসকিতা পরিবর্তন করতে কিছু ফেক ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন ব্যবহার করে যেন গ্রাহকদের অপছন্দীয় কোন পণ্য কিনতেও অকৃষ্ট হয়।

ভুয়া ওয়েবসাইট: জালিয়াতি করার জন্য এমন ওয়েবসাইট তৈরি করে যা কোনো বৈধ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এর মত দেখতে হয়। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন লগইন করার তথ্য এবং ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ চুরি করে।

ফিশিং ইমেইল: তারা নামকরা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যাবহার করে প্রতারণামূলক ইমেইল পাঠায়, যার মাধ্যমে কোন লিংকে ক্লিক করিয়ে সব ক্রেতাদের ডিভাইসে হ্যাকার এক্সেস নিয়ে নেয়।

বিনোয়গকারীদের সঙ্গে প্রতারনা: প্রতারণাকারীরা অবাস্তব রিটার্ন এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পূর্বের টাকা পরিশোধ না করেই।

সামগ্রিকভাবে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠতে, ভোক্তা এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে…

ভোক্তা সচেতনতা: জালিয়াতির সাধারণ কৌশল এবং কীভাবে সেগুলো চিহ্নিত করা যায় সে সম্পর্কে ভোক্তাদের শিক্ষিত করুন। কেনাকাটা করার আগে বিক্রেতা এবং পন্যটির কাস্টমার রিভিও নিয়ে যাচাই করতে তাদের উৎসাহিত করুন। তাদের এমন কেনাকাটা সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিন যার তথ্যগুলো সত্য বলে মনে হয় না।

কঠোর নিয়মাবলী: লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা এবং স্বচ্ছতার মান সহ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আরও কঠোর নিয়মাবলী বাস্তবায়ন করা। প্রতারণা মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী ভোক্তা সুরক্ষা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। সংবেদনশীল আর্থিক তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করা।

বিক্রেতাকে যাচাই করে নেয়া: বিক্রেতাদের বৈধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য দুই-তিন স্তরের কঠোর যাচাইকরণ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা। বিক্রেতাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে রেটিং এবং তা পর্যালোচনা করার জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা।

কাস্টমার সাপোর্ট: সমস্যা দ্রুত সমাধানে শক্তিশালি কাস্টমার সাপোর্ট এর ব্যাবস্থা করা। যোগাযোগের একাধিক মাধ্যম- ফোন, ইমেল এবং লাইভ চ্যাট প্রদান করা।

ডেটা গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা: গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করুন। সকল সমস্যা সঠিক ভাবে সমধান হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পর্বেক্ষন করা।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা: প্রতারকদের তদন্ত ও বিচারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করুন। ভবিষ্যতের অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সন্দেহ জনক যে কোন তথ্য শেয়ার করে রাখুন।

এই কৌশলগুলো গ্রহণ করে, ভোক্তা এবং ই-কমার্স ব্যবসায়ী উভয়ই বাংলাদেশে একটি নিরাপদ এবং আরও বিশ্বাসযোগ্য ই-কমার্স পরিবেশ তৈরি করে একসাথে কাজ করতে পারবে বলে মনে করি।

সর্বোপরি একটি যুগ উপযোগী আধুনিক ই-কমার্স ব্যবসার নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী যেখানে ভোক্তা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দু’পক্ষেরই স্বার্থ সুরক্ষা হবে তা ছাড়া দু’পক্ষই কোনরকম নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসো।

লেখক: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *