আসন্ন ই-ক্যাব নির্বাচনে মাত্র ১৪% ভোটার?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)- এর ২,৮৪১ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪০৭ জন ভোটার হয়েছেন। ৫৬ হাজার কোটি টাকার বাজারের একটি শিল্পের এই চিত্র খুব বেমানান, আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ উদ্যোক্তা ই-কমার্স শিল্পে রয়েছেন। আসন্ন ই-ক্যাব এর ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদ (ইসি)-এর নির্বাচনে মাত্র ১৪% ভোটার হলেন?
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অ্যাসোসিয়েশনটির বর্তমান এই অবস্থা কেন? কারা এর পেছনে দায়ী? মোট সদস্যের ৫০% ভোটার না হলে; একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা কি এই শিল্পের মধ্যে থাকবে। যারা আগামীতে নেতৃত্ব দেবেন তারা এই ক্ষুদ্র একটি অংশের সমর্থন নিয়ে কিভাবে এত বড় শিল্পের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলবেন?
সে জন্যই আমি ই-ক্যাব নির্বাচন পেছানোর পক্ষে, আরও সদস্য ভোটার হওয়ার সুযোগ তৈরি করার পক্ষে। অ্যাসোসিয়েশন বিমুখ সদস্যদের মাঝে যোগাযোগ করে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কি দিতে চাচ্ছেন বা কিভাবে তারা পরিকল্পনা করছেন সেটি জানালে বরঞ্চ এটি আরও এই শিল্পের জন্য অনেক উপকার হবে।
শোনা যাচ্ছে সরাসরি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন না করে বাছাইয়ের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছেন কেউ কেউ এখনও। আর যদিও বা সরাসরি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হয়, সেটি নাকি হবে একটা প্রি-সিলেক্টেড কমিটি। তাহলে কি আমরা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবো সেই বাছাইয়ের যুগে?
আবার অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর ই-ক্যাবের কান্ডারী রূপে যারা নতুন স্বাধীনতার এই সময়ে নতুন বাংলাদেশে আমরা যদি আবার সেই বাছাইয়ের যুগেই ফিরে যাই, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ বা প্রেক্ষাপট তৈরি না করি তাহলে হয়তো নিশ্চয়ই নেতৃত্বের জায়গায় যাওয়া যাবে কিন্তু তাতে সাধারণ সদস্যদের শ্রদ্ধা আর সম্মানবোধ কতটুকু থাকবে সেটিই মূল ভাবনার বিষয়।
আসন্ন ই-ক্যাব নির্বাচনে আমরা এমন ব্যক্তিদের নেতৃত্ব দেখতে চাই না, যারা ই-ক্যাবকে ধারণ করেন না, অ্যাসোসিয়েশনে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই, সদস্যরা যাদের চেনেন না বা সদস্যদের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা নাই, ই-কমার্স ব্যবসা করেননা বা এই শিল্প সম্পর্কে নলেজ রাখেন না। নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিরা অবশ্যই যোগ্য হওয়া উচিত। শুধুমাত্র চেতনা আর আদর্শ যাদের কাছে বড় তারা সদস্যদের জন্য যে এমন কিছু করতে পারবেন সেটি আমার মনে হয় না, বরঞ্চ সেই জায়গাতেই নিজেদের লাভটাই হবে হয়তো বেশি। তবে এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।
আসন্ন ই-ক্যাবের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে এই অ্যাসোসিয়েশনটির আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম বা যে সব নীতিমালায় অ্যাসোসিয়েশনটি চলে বা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় সে সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা উচিত। অনেকেই নিজেদেরকে বিভিন্ন পদ উল্লেখ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন যা সম্পূর্ণ নির্বাচন নিয়মবহির্ভূত। মূল নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই হবে ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের জন্য। তারপরই নির্বাচিত ১১ জন পরিচালক অফিস বেয়ারার বা পদধারীগন পরে নির্বাচিত হবেন।
একটি প্যানেল করার জন্য তুমুল আয়োজন চলছে ১১ জনের বাইরেও আরও ১২ থেকে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র কিনবেন এবং সময় মত মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে ফেলবেন যাতে মনোনীত ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তা ছাড়া স্বতন্ত্র বা অন্য প্যানেল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেটির চেষ্টাও করা হচ্ছে। যা এখনও বোঝানোর পর্যায়েই আছে। এমনটা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে যা আমার মনে হয়।
এইসব কথাগুলো লেখার একটিই উদ্দেশ্য আমি এবং আমার মত অনেকেই যেভাবে ই-ক্যাবকে ধারণ করেন, বর্তমানে অনেক নতুন সদস্যরাই তেমনটি করেন না অথবা এর ইতিহাসগুলোও জানেন না। নেতৃত্বের পর্যায় আসলে অবশ্যই এর ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং যারা এর জন্য কাজ করে গেছেন তাদের সম্পর্কেও জানাটা জরুরী।
একটি সময় পর্যন্ত ই-ক্যাবে বাছাইয়ের যুগই ছিল। মনোনয়ন পত্র ফি বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল এবং মনোনয়ন পত্র না কেনার জন্য নানাভাবেই বোঝানো হতো। যার ফলে ২০২২ সালের আগে প্রত্যক্ষ ভোটে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং আমার মত আরও গুটি কয়েক সদস্যের প্রচেষ্টা, অনেক লেখালেখি, মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ির হলে ২০২২ সালে প্রথম প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন দিতে তৎকালীন নির্বাহী পরিষদ (ইসি) বাধ্য হয় এবং একই প্রক্রিয়ায় ২০২৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
মতামত লেখকের নিজস্ব: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব