অবৈধ আমদানিকারক ও স্মাগলার সিন্ডিকেট এনইআইআর নিয়ে অপপ্রচার করছে
ক.বি.ডেস্ক: অবৈধ আমদানিকারকদের চক্র ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। একটি বিষয় স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, বর্তমানে যে মোবাইল ফোন আপনি ব্যবহার করছেন সেটি বৈধভাবে কেনা হোক, অবৈধভাবে কেনা হোক বা বিদেশ থেকে আনা হোক কোনোটিই বন্ধ হবে না। আপনার ব্যবহৃত চলমান মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা সম্পূর্ণ ভুল। সবাইকে এসব বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।
আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে মধ্যরাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ১০ ঘণ্টা পর আবার ছেড়ে দেয়ার কারণ এখনো স্পষ্ট হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার পেছনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জড়িত বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “একজন সাংবাদিককে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চলছে আজ সকাল থেকে। সবার আগে আমি স্পষ্টভাবে এবং জোরালো ভাষায় বলছি- ওই সাংবাদিককে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আমার কোনও ধরনের ভূমিকা নেই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
কেন এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে এ বিষয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, “বিটিআরসি সম্প্রতি অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি, চোরাচালান, চুরি, জালিয়াতি এবং শুল্ক ফাঁকিরোধে এনইআইআর চালুর ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে বৈধভাবে ফোন উৎপাদনকারী বিনিয়োগকারীরা বহুদিন ধরেই এ উদ্যোগ চেয়ে আসছিলেন। আজ দেশে অ্যাপল ছাড়া প্রায় সব বড় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডেরই কারখানা রয়েছে। এনইআইআর ঘোষণার পরপরই অবৈধ আমদানিকারক ও স্মাগলার সিন্ডিকেট বিভিন্ন মার্কেটে বহিরাগত দিয়ে বিক্ষোভ, দেশীয় ব্র্যান্ডের শোরুমে হামলা, কর্মচারীদের হুমকি এসব তৎপরতা শুরু করে। তারা এনইআইআর নিয়ে অনেক অপপ্রচারও করছে।”
দেশে ব্যবহৃত কোনও মোবাইল ফোন বন্ধ হবে না জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “একটি বিষয় স্পষ্টভাবে জানাতে চাই বর্তমানে যে মোবাইল ফোন আপনি ব্যবহার করছেন সেটি বৈধভাবে কেনা হোক, অবৈধভাবে কেনা হোক বা বিদেশ থেকে আনা হোক কোনোটিই বন্ধ হবে না। আপনার ব্যবহৃত চলমান হ্যান্ডসেট বন্ধ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা সম্পূর্ণ ভুল। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অবৈধ আমদানিকারকদের মাধ্যমে দেশে চোরাপথে আনা নতুন মোবাইল ফোনগুলো বাংলাদেশে নেটওয়ার্কে কাজ করবে না। এর বাইরে সাধারণ ব্যবহারকারীর কোনও ফোন বন্ধ হবে না। আপনার কেনা মোবাইল ফোনটি বৈধ বা অবৈধ কিনা তার যাচাই আপনি শোরুম থেকে জাস্ট একটি এসএমএসের মাধ্যমে করতে পারবেন। আরেকটি বিষয়, যে কেউ বিদেশ ভ্রমণে নিজের ব্যবহারের ফোনের বাইরে একটি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন সঙ্গে আনতে পারবেন।”
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব তার ফেসবুক পোস্টে জানান, “গত সপ্তাহে এই চক্রের কয়েকজন প্রতিনিধি দেখা করতে আসেন। তাদের দুটি শর্ত দেয়া হয়- দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শোরুমে হামলা, বন্ধ করা ও হুমকি বন্ধ করতে হবে। এনইআইআর বিরোধী সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তারা যদি এই দুই শর্ত মানে, তাহলে বৈধ ফোন আমদানির শুল্ক কমাতে এনবিআরকে চিঠি দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করব। তারা এরপর আর যোগাযোগ করেনি। এরপর গতকাল সাংবাদিকদের কাছে প্রেস কনফারেন্সের নিমন্ত্রণের একটি চিঠি আসে- ‘Addressing Regarding NEIR Implementation’ শিরোনামে যেখানে মোহাম্মদ আসলাম নামে একজন নিজেকে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন।”
এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব তার ফেসবুক পোস্টে জানান, “এই সংগঠনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিওটিতে নিবন্ধিত নয়। পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, অবৈধ আমদানিকারক চক্রই ভুঁইফোঁড় পরিচয়ে নতুন এক সংগঠন বানিয়ে এনইআইআরবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। আসলামের যে নাম্বার দেওয়া হয় সেটি সেই সাংবাদিকের বলে আমাকে অন্তত হাফ ডজন মানুষ নিশ্চিত করেছেন এবং সেই সাংবাদিক নিজেই সাংবাদিকদের কাছে সেই প্রেস ইনভাইটেশনটি পাঠান। এই অবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠছে একজন সাংবাদিক কিভাবে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের “সভাপতি” পরিচয়ে ভুয়া টাইটেল, ভুয়া পরিচয় ও নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে স্মাগলিং-অভিযুক্ত গোষ্ঠীর হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন?”
ফেসবুকে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব আরও লিখেছেন, “একজন সাংবাদিক কীভাবে চোরাচালান কারবারিদের মুখপাত্র, পিআর এজেন্ট, পরামর্শক বা বেনেফিশিয়ারি হয়ে কাজ করতে পারেন? এটা কি সাংবাদিকতার নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? সুতরাং, কেউ আইন-এর ঊর্ধ্বে নয়। যে কোনও পেশার মানুষ যদি নৈতিক সীমার বাইরে গিয়ে কোনও অবৈধ চক্রের সঙ্গে জড়িত হন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন। তবে আমি মনে করি, এ ধরনের পদক্ষেপ দিনের বেলায়, স্বচ্ছভাবে নেয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সবার জন্যই নিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করে। সবাইকে অনুরোধ করছি অবৈধ আমদানিকারকদের চক্র যেসব ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে, সেগুলোতে কান না দিয়ে সতর্ক থাকুন।”
তিনি আরও বলেন, “মূল ইস্যু হলো অবৈধ ফোন আমদানিকারকরা এনইআইআর বন্ধ করতে এবং বৈধ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এজন্য তারা অনেক অর্থ ব্যয় করছে। তাই আপনারা দেখবেন আমার ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়াতে মিথ্যার ছড়াছড়ি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই যে এনবিআর মোবাইল আমদানি শুল্ক ও স্থানীয় উৎপাদনের কর কাঠামো যৌক্তিকভাবে পুনর্বিবেচনা করুক, যাতে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য মোবাইল ফোনের মূল্য আরও কমে আসে। ইতিমধ্যেই আমরা বিটিআরসির মিটিংয়ে বিষয়টি তুলেছি এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানানো হয়েছে।”





