অফসাইডের জন্য ‘সেমিঅটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে আগামীকাল ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ ‘‘ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২’’। এবারই মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফুটবলের মানোন্নয়নে এবং রেফিারিংকে নিখুঁত করতে ফিফা নিত্যনতুন প্রযুক্তিন খোঁজ করছে। এবারের বিশ্বকাপে প্রযুক্তির সহায়তায় অফসাইড ধরা হবে। অফসাইডের জন্য চালু হচ্ছে ‘‘সেমি অটোমেডেট অফসাইড প্রযুক্তি (এসএওটি)’’। প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোন অফসাইড হলেই ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে। ফিফার তিন বছরের পরীক্ষার ফল দেখা যাবে এবারের বৈশ্বিক এই আসরে।
কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাবে সেমি অটোমেডেট অফসাইড প্রযুক্তি (এসএওটি)। ফুটবলে একজন ফুটবলারের অফসাইডের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে ফিফার। তারপরও এতে অফসাইড নিয়ে বির্তক থাকবে না। এবারের বিশ্বকাপে ভিএআরও থাকবে। তবে রেফারিকে সময় নষ্ট করে মেশিনের কাছে গিয়ে চেক করা লাগবে না। ভিএআর’কে আরও দ্রুত গতির করার প্রযুক্তি বলা চলে। এটিকে ভিডিও ম্যাচ রেফারিও বলা যায়। এর মাধ্যমে ভিডিও অপারেশন রুম অফসাইড হলে অটোমেটিক একটি সিগনাল পাবে। প্রযুক্তি অটোমেটিক অফসাইড লাইন এঁকে দেবে। এমনকি ফাউল, অফ সাইড বা হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রে ‘কিক স্পট’ চিহ্নিত করে দেয়া হবে। ফুটবল অন্য ক্রীড়া আয়োজনের মতো নয়। গতিই এর প্রাণ। সেজন্য ভিএআর চেক করতে গিয়ে যাতে ফুটবল গতিহারা না হয়। সেজন্য ফিফার এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
এখন ভিএআর চেক করা হয় সম্প্রচার স্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরার মাধ্যমে। সেমি-অটোমেডেট অফসাইড প্রযুক্তির (এসএওটি) জন্য স্টেডিয়ামে বেসপোক ক্যামেরা বসানো হবে। যে ক্যামেরা মাঠে থাকা ২২ খেলোয়াড়ের একদম সঠিক অবস্থান জানান দেবে। এমনকি তাদের পা, হাতের আঙুল, মাথার অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য দেবে। এ ছাড়া কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল ‘আল রিহলা’তে থাকবে সেন্সর। যা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ সেন্সর পাঠাবে। যার মাধ্যমে বলে পাস দেয়ার সময় খেলোয়াড় অফসাইড কিনা তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। ভিএআরে বেনিফিট অব ডাউট থাকত। অর্থাত বল পাস দেয়ার সময় অফসাইড খেলোয়াড়ের অবস্থান নির্ধারণ করতে কিছু অনিশ্চয়তা থাকতো। এখানে সেটা থাকবে না। এটা গোল লাইন প্রযুক্তির মতো চূড়ান্ত ফল দেবে। গোল লাইনে যেমন এক সেন্টিমিটার লাইনের বাইরে নাকি ভেতরে তা নিশ্চিত করা যায়। একটা থ্রি ডি ছায়া ফেলা হয়। অফসাইডের ক্ষেত্রেও তেমনি ফুটবলার পা, হাতের আগুল, মাথা যাই লাইনের বাইরে যাক না কেন তা ধরা পড়বে।
দর্শকদের অফসাইড বুঝার ক্ষেত্রে ভিএআর আগের মতোই বিষয় থাকবে। গোল লাইনের মতো অ্যানিমেশন করে ফুটবলারের অবস্থান, শট নেয়ার সময় ও লাইন দেখানো হবে। তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অ্যাকশন রিপ্লে করা হবে না। বরং রেফারিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার পরে দেখানো হবে। পূর্বের মতোই সহকারী রেফারি বা লাইন্স ম্যান থাকবেন। সেমি-অটোমেডেট অফসাইড প্রযুক্তি ভিএআর রুমকে প্রতিটি অফসাইডের সিগনাল দেবে। কিন্তু গোল, পেনাল্টি বা কার্ডজনিত ব্যাপার কিংবা রেফারি ম্যাচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মনে না করলে ভিডিও রুম রেফারিকে জানাবে না। দৃশ্যমান অফসাইডের ক্ষেত্রে রেফারি ফ্লাগ উঠাবেন এবং সেক্ষেত্রে ভিডিও রুমের সহায়তা নেয়া হবে না।
গত ১০ আগস্ট ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে রিয়াল মাদ্রিদ ও এইন্ট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের মধ্যকার অনুষ্ঠিত উয়েফা সুপার কাপের ম্যাচে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আয়োজিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাতারে অনুষ্ঠিত আরব কাপে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ২০২২-২৩ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রতিযোগিতায়ও অফসাইডের সিদ্ধান্ত নিতে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হবে বলে জানায় উয়েফা।
এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) দলকে খেলার গতি ব্যাহত না করে অফসাইড নিয়ে দ্রুত ও নিখুঁত সিদ্ধান্ত দিতে সহায়তা করবে।