অনলাইনে হয়রানির শিকার? করণীয়
ক্যাম্পাসেই নাদিয়া আর রাহাতের (ছদ্মনাম) পরিচয়, তারপর প্রেম। আসা হল পরষ্পরের আরও কাছাকছি। বছর দুই না যেতেই ভেঙ্গে গেল সম্পর্ক। ঘটনা এতটুকুতে শেষ হলে পারত। কিন্তু রাহাত তা হতে দিল না। ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন গ্রুপ আর ইউটিউবে ছড়িয়ে দিল নাদিয়ার সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও। যে ছিল হৃদয়ের দাবিদার আজ সে এক নির্মম বিভীষিকা। অপমানে লজ্জায় নাদিয়ার মনে হতে লাগল আত্মহননই বুঝি মুক্তির একমাত্র পথ।
নাদিয়ার মত এমন ভুক্তভোগী বোন হয়তো আছে আমার আপনার আশেপাশেই। সোশাল মিডিয়ার এ যুগে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্যের আদান প্রদান যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি/ভিডিও অপব্যবহার করে ব্লেকমেইলিংসহ নানান রকম হয়রানির পরিমাণ।
কোন কোন ক্ষেত্রে ভিকটিম নিজেও জানছেন না তার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে অপরাধী/অপরাধীরা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে আপত্তিকর মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট বা উগ্র ধর্মীয়/সন্ত্রাসবাদী ধ্যানধারণা। প্রতিকার চাওয়া তো দূরের কথা অনেক সময় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশও করাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এ ধরণের সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন যে কেউ। এমতাবস্থায় আপনার করণীয় কি?
কি ধরণের হয়রানির শিকার হতে পারেনঃ
ফেসবুক বা ইমেইল একাউন্ট হ্যাক হওয়া, ফেক আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার, উগ্রধর্মীয়-সন্ত্রাসবাদী কনটেন্ট শেয়ার, অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে তার বিকৃত তথ্য ও ছবি ব্যবহার, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, অনলাইনে প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি।
কোথায় অভিযোগ করবেনঃ
প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করতে পারেন আপনার নিকটস্থ থানায়। অথবা, ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন cyberhelp@dmp.gov.bd এই ঠিকানায়। অথবা যদি পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ করতে চান তাহলে Google Play Store থেকে ডাউনলোড করুন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন এর Hello CT অ্যাপ। এ অ্যাপ ব্যবহার করে পাঠাতে পারবেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য।
সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে যেতে পারেন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। কথা বলতে পারেন দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ । ঠিকানাঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬ শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা।
কিভাবে অভিযোগ করবেনঃ
ভিক্টিমাইজড হলে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি প্রয়োজন। যেমন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রীনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন Address Bar এর URL টি দৃশ্যমান হয়।
Hello CT অ্যাপ ও ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব কন্টেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরাসরি সফট কপি দেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আপনি প্রয়োজনে Cyber Crime Unit এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সহায়ক হতে পারে।
প্রতিরোধ আপনার হাতেই: একটু সচেতন হলেই আপনি এড়াতে পারেন এমন বিব্রতকর ঘটনা। জেনে নিন নিরাপদ থাকার কিছু কৌশল
অচেনা, অপরিচিত কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন না। ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সবার জন্য উম্মুক্ত রাখবেন না। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস চেক করুন। অন্য কারও পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করার অপশন উম্মুক্ত রাখবেন না।
প্ররোচিত হয়ে উস্কানিমূলক ছবি/ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। সন্দেহজনক কোন লিংকে ক্লিক করবেন না। লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করুন এবং প্রতিবার ব্যবহার শেষে লগ-আউট করুন। সন্দেহজনক কোন ইমেইল বা মেসেজ এর উত্তর প্রদান হতে বিরত থাকুন।
আপনার কোন পরিচিতজনের বিপদের কথা জানিয়ে ইমেইল অথবা মেসেজ আসলে আগে যাচাই করুন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বিপুল পরিমাণ অর্থ লটারীতে জিতেছেন-এমন তথ্যসহকারে পাঠানো ইমেইল বা মেসেজ এর উত্তর প্রদান হতে বিরত থাকুন। এসকল তথ্যসম্বলিত মেইল অনুসন্ধানে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার সচেতনতা ও সহযোগিতা আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাজেই এসংক্রান্ত তথ্য দিন, নিরাপদে থাকুন। আপনার যেকোন প্রয়োজনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা আপনার পাশে রয়েছে।