আনুষাঙ্গিক মোবাইল সাম্প্রতিক সংবাদ

হুয়াওয়ের মুনাফা বেড়েছে ৭৬ শতাংশ!

ক.বি.ডেস্ক: হুয়াওয়ে সম্প্রতি ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে গত বছরে প্রতিষ্ঠানটির দৃঢ়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং সামনে কীভাবে হুয়াওয়ে আইসিটি খাতকে সামগ্রিক কল্যাণে কাজে লাগাতে এগিয়ে আসবে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদন উন্মোচন উপলক্ষে ঢাকায় সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফ্যাং, বাংলাদেশ বোর্ড অব ডিরেক্টর জেসন লিজংশেং, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার কেভিন স্যু, পাবলিক এফেয়ারস অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর ইউয়িং কার্ল এবং আরও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে হুয়াওয়ের আয় হয়েছে ৮.৬৫ ট্রিলিয়ন টাকা যেখানে নিট মুনাফা ১.৫৪ ট্রিলিয়ন টাকা। এই অর্জন বিগত বছরের তুলনায় ৭৫.৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের ২২.৪ শতাংশ। বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ খরচ হয়েছে ১১.৪৮ ট্রিলিয়ন টাকা এরও বেশি। সামনে ডিজিটাল পাওয়ার ও ক্লাউডে হুয়াওয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে চায়। এজন্য সামনের দিনগুলোতেও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট খাতে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

২০২১ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজনেসে ৩.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা আয় হয়েছে এবং সারা বিশ্বজুড়ে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃস্থানীয় ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে সহায়তা করেছে। তৃতীয় পক্ষের দ্বারা করা এক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবসহ ১৩ দেশের গ্রাহকদের জন্য হুয়াওয়ে নির্মিত ৫জি নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যারিয়ার এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে হুয়াওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ৫জি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ৩০০০ এর বেশি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ধরনের ৫জি অ্যাপ্লিকেশনগুলো বর্তমানে উতপাদন, খনি, লোহা ও ইস্পাত প্ল্যান্ট, বন্দর এবং হাসপাতালের মতো খাতগুলোতে বড় আকারের বাণিজ্যিক ব্যবহার করেছে।

প্যান জুনফ্যাং বলেন, গত ২৩ বছর থেকে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই সময়ে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশের সামনে যে অমিত সম্ভাবনা সেক্ষেত্রে ইনোভেশন, লোকালাইজেশন ও কলাবোরশনের মাধ্যমে কাজ করে যেতে চাই আমরা। এর মধ্যেই হুয়াওয়ের ক্লাউড সার্ভিস বিশ্বব্যাপী সারাবিশ্বে পঞ্চম এবং চীনে তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। পাশাপাশি ডিজিটাল পাওয়ার সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ সোলার প্লান্টে হুয়াওয়ের স্মার্ট ফটোভোলটিক সলিউশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই বছর বাংলাদেশে এই খাতগুলোর আরও বেশি সহযোগী হয়ে উঠতে চায় হুয়াওয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আইসিটি ট্যালেন্ট তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ আইসিটি ডিভিশনের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ আইসিটি স্কিলস কম্পিটিশন নামে একটি নতুন প্রোগ্রাম চালু করে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ।

জেসন লিজংশেং বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যত পৃথিবীতে দক্ষ তরুণদের অনেক প্রয়োজন তৈরি হবে। বাংলাদেশের এক দারুণ শক্তি এই দেশের তরুণ। আমরা চাই এদেশের তরুণরা বিশ্ববাজারে নিজদের জায়গা করে নিক এবং নিজেদের দক্ষতা, দারুণ সব আইডিয়া দিয়ে বাংলাদশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাক। তাই আমরা গত অনেকগুলো বছর থেকেই এদেশের তরুণদের আইসিটি খাতে দক্ষ করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় এক লক্ষ তরুণদের আইসিটিতে দক্ষ করে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি যেখানে বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণ অংশ নিতে পারবে। এবছর বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজাররেও বেশি তরুণ এই সুযোগ পাবে।

ডিজিটাল রূপান্তরের প্রবণতা অব্যাহত রাখার জন্য হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর, হুয়াওয়ে সরকার পরিবহন, অর্থ, শক্তি এবং উতপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য ১১টি সিনারিও-বেজড সলিউশন চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি একটি কোল মাইন টিম, স্মার্ট রোড টিম এবং একটি কাস্টমস ও পোর্ট টিমসহ একাধিক নিবেদিত প্রাণ দল তৈরি করেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিত হয়ে, আরও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে৷ সাতশ’টিরও বেশি শহর এবং ২৬৭টি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানি তাদের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন পার্টনার হিসেবে হুয়াওয়েকে বেছে নিয়েছে এবং হুয়াওয়ে এখন সারা বিশ্বে ছয় হাজারেরও বেশি পরিষেবা এবং অপারেশন পার্টনারদের সাথে কাজ করছে।

হুয়াওয়ের কনজ্যুমার বিজনেস গ্রাহকদের চাহিদা এবং প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিমলেস এআই লাইফ কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের জন্য একটি স্মার্ট, অল-কানেক্টেড এরা নিশ্চিতে গ্লোবাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করেছে। হুয়াওয়ের এ ব্যবসা ২০২১ সালে ৩.৩০ ট্রিলিয়ন টাকা আয় করেছে এবং স্মার্ট ওয়্যারেবলস, স্মার্ট স্ক্রিন, ট্রু ওয়্যারলেস স্টেরিও (টিডব্লিউএস) ইয়ারবাড এবং হুয়াওয়ের মোবাইল সার্ভিসেস (এইচএমএস)-এর বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, স্মার্ট ওয়্যারেবলস এবং স্মার্ট স্ক্রিন দু’টি ক্ষেত্রেই বছরে ৩০ শতাংশের ও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে, ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২০ মিলিয়নেরও বেশি হুয়াওয়ে ডিভাইসে হারমনিওস ব্যবহৃত হয়েছে, যা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ডিভাইস অপারেটিং সিস্টেম হয়ে উঠেছে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *