প্রতিবেদন সাম্প্রতিক সংবাদ

ডিজিটাল বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আধুনিক সোনার বাংলা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’’ এর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের একটি দেশে পরিণত করা। বাঙালির দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারতেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতির পিতা, কারণ এ জাতির কল্যাণের কথা তিনি শুধু চিন্তাই করেননি, সে অনুযায়ী আজীবন কাজও করে গেছেন। তিনি জানতেন যেভাবে পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে, বাংলাদেশকেও সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। তাই তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত করতে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরপরই তিনি বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে।

বঙ্গবন্ধু প্রায় ৪৮ বছর আগে যা যা ভেবেছিলেন বিশ্ব এখন অনেকটা ওই পথেই হাঁটছে। তিনি চেয়েছিলেন সবার জন্য শিক্ষা এবং তার জন্য কাজও করে গেছেন। চাইতেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিক মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিনি আরও চেয়েছিলেন এদেশের মানুষ যেন বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকে। বাংলাদেশের জনশক্তি যাতে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারে সেই চেষ্টা তিনি করে গেছেন।

কিন্তু ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর ঘাতক নরপিশাচরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর সকল স্বপ্নকেও হত্যা করে। তাঁরই দেখানো পথ ধরে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করছেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আজকের বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে পূর্বের তুলনায় অনেক এগিয়ে, কিন্তু দেশকে আজকের এই অবস্থানে আনার মূল বীজ বপন করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই স্বপ্নের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ।

বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর প্রভূত উন্নতির কারণ তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উতকর্ষতাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এই বিষয়টি বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। আর তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই -খুদা। এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আর তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যদিও তিনি তা সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি, কিন্তু তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।


৭ জুন ১৯৭৪ ড. কুদরত-ই-খুদার কাছ থেকে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট  গ্রহন করছেন বঙ্গবন্ধু

আমরা এখন এতটাই তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছি যে একটা দিনও আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া চলতে পারি না। বঙ্গবন্ধু তা অনুধাবন করেছিলেন বহু বছর আগেই। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের যুগ চলছিল। বঙ্গবন্ধু এই শিল্প বিপ্লবের যুগে পিছিয়ে থাকতে চাননি। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU)-এর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন। যার ফলে বাংলাদেশ সহজেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে। একটি দেশের উন্নতিতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা অত্যাবশ্যকীয়, যা বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টির কারণে এর সুফল আমরা ভোগ করছি।

দেশে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬১ সালে পাবনা জেলার রূপপুরে। কিন্তু প্রকল্পটি অনিবার্য কারণে স্থগিত হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্থগিত হয়ে যাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রই নির্মাণ করা হবে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশগুলোয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)প্রতিষ্ঠা করেন।

বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন

এসবই তিনি করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হবার তিন বছরের মধ্যে। আমরা এতটাই অভাগা যে তাঁর মতো একজন মহামানবকে ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন। যার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম যোগাযোগ উপগ্রহের মালিকানা লাভ করে। এই স্যাটেলাইটের নাম দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু-১। এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। অত্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট (৪জি) সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে যাত্রা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি এবং ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নব যুগের সূচনা ঘটাবে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU)-এর সদস্যপদ লাভ করে।

এসব কিছুর জন্য তিনি কাজও করে গিয়েছেন কিন্তু অনেক কিছুই তিনি করে যেতে পারেননি, কারণ তাকে চলে যেতে হয়েছে খুব আকস্মিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই। তিনি হয়তো আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, তাঁর দিকনির্দেশনা এখনও আছে। এই দিকনির্দেশনা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আধুনিক সোনার বাংলা। আজকের বাংলাদেশের মুকুটে সাফল্যের যে সকল পালক যুক্ত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুই সে সকল স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন, বঙ্গবন্ধু থাকবেন আমাদের সকল বিজয়ে, সকল অনুপ্রেরণায়।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *