প্রতিবেদন সাম্প্রতিক সংবাদ

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১

ক.বি.ডেস্ক: গত ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিওটিও সেল থেকে ‘‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’’ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ এর ৩.৩.৬ বিধির নির্দেশনা অনুসারে এটি প্রনয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা বিক্রেতা ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষন করবে। এই নির্দেশিকা প্রতিপালনের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরকারী এবং বেসরকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে একাধিকবার আলোচনার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করেছে। তাই নিয়ে লিখেছেন…ফারুক আহমেদ শিবলু

সমস্যার সমাধানের একটা গাইডলাইন এই নীতিমালা। এ ছাড়া প্রচলিত আইন ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত সমন্বয় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন সহজ হবে। ক্রেতাদের অধিকার রক্ষা এবং বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এই নির্দেশিকায়।

চলতি বছর মার্চ মাসে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ এর খসড়া প্রনয়ন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২০ মার্চ সরকারী বিভিন্ন এজেন্সির মতামত সমন্বয় করে একটি সভার মাধ্যমে অংশীজনদের মতামত নেয়া হয়। মতামতসমূহ সংযুক্ত করে গত ২১ জুন আরেকটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্দেশিকায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, আইসিটি ডিভিশন ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের মতামত যুক্ত করা হয়।

বর্তমানে ই-কমার্সে কেনাকাটা করতে গিয়ে ক্রেতারা যেসব সমস্যার সন্মুখীন হন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রতিশ্রুত সময়ে পণ্য না পাওয়া। এমনকি কয়েক মাসেও পণ্য না পাওয়া, বিক্রেতা কর্তৃক পণ্যের স্টক না জানিয়ে অধিক অর্ডার নিয়ে রিফান্ড পেতে ভোগান্তি। বিক্রেতা পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে অগ্রিম টাকা ফেরত দিতে কয়েকমাস সময় নেয়া, কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করলে সমাধান না পাওয়া ইত্যাদি।

ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষায় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় এই বিষয়গুলোর স্পষ্ট নীতিমালা এবং বাধ্যবাধকতা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিক্রেতা এই নীতিমালা নীতিমালা না মানলে যথাযথ শাস্তির বিধান এবং ক্রেতা কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও উল্লেখ রয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার তোয়াক্কা না করে খেয়াল-খুশিমতো পরিচালনা করতে পারবে না।

ক্রেতার সুরক্ষায় ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকায় কি রয়েছে: ই-কমার্সের মাধ্যমে এমএলএম, জুয়া এবং লটারি ব্যবসা করা যাবে না। যেকোনো অভিযোগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি প্রদান করতে হবে।

ক্রেতা কোনো মাধ্যমে অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে সে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ যে মাধ্যমে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করেছেন সেই একই মাধ্যমে ফেরত প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো চার্জ থাকলে মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে তা বহন করতে হবে;   

বিক্রয় বিজ্ঞপ্তিতে কী পরিমাণ পণ্য স্টকে রয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে এবং পণ্যের স্টক হালনাগাদ করতে হবে। পণ্য বিক্রেতা বা চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্পষ্টভাবে স্টকে নেই কথাটি স্পষ্টভাবে পণ্যের পাশে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে রেডি টু শিপ অবস্থা ব্যতিরেখে কোন ধরণের পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।

বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা পণ্য সামগ্রী ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে হবে; অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভিতরে রেডি টু শিপ পর্যায়ে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য গ্রহণের পরবর্তি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা প্রতিষ্ঠাণের হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় নেই এমন পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের ১০% এর বেশি অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে ১০০% পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে

নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অনান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এ নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা ক্রেতা বা কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ প্রতিপালনের মাধ্যমে ক্রেতাদের ভোগান্তির অবসান হবে। এতে করে ই-কমার্সে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, ই-কমার্সে ক্রেতার আস্থা বাড়বে, ফলে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়বে, একইসঙ্গে ই-কমার্সে নতুন উদ্যোক্তাও বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থান হবে।  

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *