সাম্প্রতিক সংবাদ

ইন্টারনেট খাতে ভ্যাটের জটিলতা নিরসন চায় আইএসপিএবি

ইন্টারনেট খাতে ভ্যাটের জটিলতা নিুরসন এবং আইএলডিসি,আইআইজি এবং আইএসপিকে আইটিইএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা সংস্থা আইএসপিএবি এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি উপস্থাপন করেন। অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি এফ এম রাশেদ আমিন বিদ্যুত, সাধারন সম্পাদক মো. ইমদাদুল হক,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ মো. সারোযার আলম সিকদার, পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁইযা, পরিচালক মো. কামার হোসেন, পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন, পরিচালক মো. রাইসুল ইসলাম তুহিন এবং পরিচালক মোহাম্মদ ওহিদউল্লাহ ভূঁইয়া প্রমুখ।

আইএসপিএবি-ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে অর্থবহ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নের্তৃত্বে এবং তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক পরিকল্পনায় ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে আইএসপিএবি’র সর্বাত্মক সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।

যোগাযোগ-প্রযুক্তি ছাড়াও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইন্টারনেট কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। করোনাকালে সরকারি ও বেসরকারি সংবাদ সম্মেলন, অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বিশেষ করে বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ বিশেষ কার্যকরী উপায় হিসেবে চলমান আছে। এক কথায় বললে দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রায় সবগুলো খাতে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।করোনা পরিস্থিতির মধ্যেওকর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও বিল আদায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছে।

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি জানায় ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% আরোপিত ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার কারণে চলমান ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আইএসপিএবি মনে করছে। গত অর্থ বছরে ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% ভ্যাট নির্ধারিত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা খাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর (আবুল মাল আব্দুল মুহিত) নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনায় ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।  পরে সে অনুযায়ী ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।

কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরের বাজেটে (২০১৯-২০২০) পুনরায় ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর নের্তত্বে সমাধান করা বিষয়টিতে আবারো আগের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন)  খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপকে বৈষম্যমূলক এবং মূসক আইনের পরিপন্থি বলেও মনে করছে আইএসপিএবি। ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইএসপিএবির প্রস্তাবনা, ইন্টারনেটের সকল ক্ষেত্রে ৫% অথবা ০% হারে ভ্যাট  আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন খাতে ১৫% ভ্যাট) সৃষ্ট নিরসন হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টরনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হবে। এর ফলে সর্বস্তরের ইন্টারনেট গ্রহীতা ও দেশের জনসাধারণ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের সকল শ্রেণির জনগণের কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেটে ভ্যাট জটিলতা নিরসন করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপের পরিবর্তিত কাঠামোটি অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়।

আইএলডিসি,আইআইজি এবং আইএসপিকে আইটিইএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি

আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপি একসঙ্গে নির্ভরযোগ্য উচ্চ গতির ইন্টারনেট এক্সেস সরবরাহ করে যা অনেক সংস্থাকে আইটি এনাবেলড সার্ভিসেস ( আইটিইএস) এ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম করে তোলে। আইটিইএস, আইটি সুবিধাসম্পন্ন সার্ভিসেসের একটি সংক্ষিপ্ত রুপ, যা খুব বেশি পরিচিত নয় এবং প্রায়শই ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং নীতি নির্ধারকরা একে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। এটি যৌক্তিক যে, আজকের আধুনিক এবং কম্পিউটারাইজড বিশ্বের প্রতিটি জিনিসই আইটি সক্ষম। বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে ভিন্ন ধারনা রয়েছে। তবে, সহজ ভাষায় আইটিইএস অর্থ – ইনফরমেশন টেকনোলজি যা সেবার মান উন্নত করে ব্যবসাকে সক্ষম করে তোলে। মূলত একে আইটি সক্ষম পরিষেবা বলে অভিহিত করা হয়।

যৌক্তিক কারণেই আইএলডিসি, আইআইজ ও আইএসপিকে আইটিএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভ্ক্তু করা উচিত। বিটিআরসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৮০ লাখ ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী আছে। আইটিইএস-এ অর্ন্তভুক্ত হলে আইএসপি ইন্ডাসট্রিজগুলোর ট্যাক্স প্রদানে সুবিধা হবে, যা ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক প্রসারে ব্যবহৃত হবে। ব্রডব্যান্ডের নেটওয়ার্ক বিস্তারের ফলে আশা করা যায়, বাংলাদেশে আগামী ১ বছরে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সংখ্যা ২ কোটিতে রুপান্তর হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ১০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১.৩৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটে। অতএব, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আমরা বলতে পারি যে, ২ কোটি ব্রডব্যান্ড সংযোগ মানে জিডিপির ১০-১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। জিডিপির ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি মানেই বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, প্রতি ১ হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অতএব, আরও ১ কোটি ২০ লাখ সংযোগ মানে আগামী ১ বছরে প্রায় ১২০০০ কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান।

আইটি সক্ষম পরিষেবা বা আইটি অ্যানাবলড সার্ভিসেস এর মধ্যে ২২ ধরনের আইটিইএস পরিষেবা রয়েছে। এগুলো হলো -সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপলিকেশন কাস্টমাইজেশন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল এ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিসেস, ওয়েবলিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েব হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি এন্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডাটা এনালিটিক্স, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট টেস্ট ল্যাব সার্ভিসেস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিসেস, কল সেন্টার সার্ভিসেস, ওভারসিস মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডকুমেন্ট কনভারসেশন, ইমেজিং এন্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবটিক্স আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস।

উল্লেখ্য যে, প্রায় সমস্ত আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপি একই ফর্মে বা ভিন্নভাবে আইটিইএস পরিষেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়া আইটিইএস সরকারি নীতিমালা গঠনের আগে থেকেই ওয়েব পৃষ্ঠার নকশা, উন্নয়ন ও হোস্টিং, ই-মেইল হোস্টিং, আইটি ও নেটওয়ার্কিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস, কল সেন্টার সার্ভিসেস, টেলিমার্কেটিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লুকিং গ্লাস ইত্যাদি সেবা প্রদান করে আসছে।

যেহেতু ইন্টারনেট আইটিইএস পরিষেবাগুলোর প্রধান, সে কারণে আমরা বিশ্বাস করি – আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপি উভয়ই আইটিইএস বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য। আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপিকে আইটিইএস বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হলে আইটি খাতে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হবে, যা পুরো আইটি শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *