উদ্যোগ সাম্প্রতিক সংবাদ

বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জে দেশব্যাপী ডিজিটাল ম্যাপিং সম্পন্ন

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির শুরুর দিকে দেশব্যাপী ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ ক্যাম্পেইনে তরুণদের অভাবনীয় অংশগ্রহণে এক লাখ ১০ হাজার লোকেশন গুগল ম্যাপ ও ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে যুক্ত করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এটুআই এবং গুগলের সমন্বয়ে গ্রামীণফোনের উদ্যোগে আয়োজিত এই ক্যাম্পেইন আজ ২১ জুন এক অনলাইনে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক।

‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ উদ্যোগের মাধ্যমে সারা দেশের তরুণরা ঘরে বসে গুগল ম্যাপ এবং ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে তাদের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর পিনপয়েন্ট করার সুযোগ পেয়েছে। বর্তমান সংকটকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশের ভৌগলিক ম্যাপিং হালনাগাদ করা খুবই জরুরি। কারণ হাসপাতাল, স্থানীয় পণ্যের বাজার, রিচার্জ পয়েন্ট, নগদ/বিকাশ পয়েন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ম্যাপে পয়েন্ট করা জরুরি। ঢাকার বাইরে যারা জরুরি সেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে শহর অঞ্চলের বাইরের গুগল ম্যাপে পয়েন্ট করা ছিল না বলে নাগরিকদের বিভিন্ন স্থান সনাক্ত করতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। ডিজিটাল ম্যাপ হালনাগাদ করার কারণে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে।

তরুণরা তাদের বাড়িতে অবস্থান করে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই এই পুরো ম্যাপিং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ম্যাপিং কার্যক্রমে শীর্ষ ১০০ জন তরুণকে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ২ মাসের জন্য ১০ জিবি (৫জিবি ৩০ দিন+ ৫জিবি ৩০ দিন) ইন্টারনেট প্রদান করা হয়েছে। শীর্ষ ২০০ জন ম্যাপার এটুআই’র ‘একশপ’ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন। সেইসঙ্গে ৩১ হাজার রেজিস্টার্ড ম্যাপারের সবাইকে আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে ই-সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, শহর, উপশহরের পর এবার এদেশের তরুণরাই গ্রামের স্থাপনা ও রাস্তাকে গুগল ম্যাপে সংযুক্ত করেছে। এই ডিজিটাল ম্যাপিংকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে সেবা নিয়ে নাগরিকদের পাশে থাকার আহবান জানাই। এই ম্যাপিং কার্যক্রম ভবিষ্যতে ডিজিটাল সকল কার্যক্রমে শহর এবং গ্রামের ব্যবধান কমিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ সুবিধা চালু এবং বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা যেন অগমেন্টেড রিয়েলিটি সলিউশন ডেভলপসহ গুগলের প্রোডাক্ট উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সেই সুযোগ প্রদানের জন্য গুগলের প্রতি আহ্বান জানান।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, শুরুতে আমরা গুগল ম্যাপ এবং ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে হাসপাতাল, ফার্মেসি, স্কুল-কলেজ এবং মোবাইল রিচার্জ পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের সেবাগুলোকে প্রান্তিক মানুষের হাত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। এরকম সংকটকালীন মূহুর্তে জরুরি সেবা পৌঁছে দিতে এবং প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে এরকম ভৌগলিক ম্যাপিং খুবই জরুরি।

এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩টি পিলারের মধ্যে ‘তারুণ্যের শক্তি’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পিলার। একাত্তরের মতো করেই এই ম্যাপিং কার্যক্রমে তরুণরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে। তাদের এমন অভাবনীয় অংশগ্রহণ ছাড়া এতো অল্প সময়ে এই বিশাল ভৌগলিক ম্যাপের পয়েন্ট করা সম্ভব হতো না। ইতোমধ্যে ৫,০০০ হাসপাতাল, ১৬,০০০ ফার্মেসি এবং ২০,০০০ মুদি দোকান সন্নিবেশিত করার পাশাপাশি ৮৭০টি রাস্তা ম্যাপে যুক্ত হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রভাব ই-কমার্স ডেলিভারি সুবিধা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের দূরত্ব কমিয়ে আনতে এই ম্যাপিং কাজে লাগবে এবং দীর্ঘমেয়াদে জাতিকে নানাভাবে সহযোগিতা করবে।

এই ক্যাম্পেইনে সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস, এটুআই, গ্রামীণফোন, প্রিনিয়র ল্যাব, ইয়ুথ হাব, গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, লোকাল গাইডস বাংলা, ইউএনডিপি, ওপেন স্ট্রিট ম্যাম বাংলাদেশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং উইমেন টেকমেকারর্স।

গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনলাইনে সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, গুগলের গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক পলিসি লীড নিক বাওয়ের, প্রিনিয়র ল্যাবের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা আরিফ নেজামি, গুগলের রিজিওনাল হেড (সাউথ এশিয়া) ফারহান কুরেশী, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া, অভিনেত্রী মারিয়া নূর, দুইজন ম্যাপার, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীগণ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *